অধিবেশনে বসছে দ্বাদশ সংসদ : যা যা থাকছে প্রথমদিন
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের সব প্রস্তুতি গুছিয়ে আনা হয়েছে। বিরোধী দল হিসেবে দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়াই এ সংসদ প্রাণবন্ত হবে বলে আশা করছেন স্পিকার।
সংসদে ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নিয়ে সংসদের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায়।
২০১৯ সালে ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। আইন অনুযায়ী এ সংসদের মেয়াদ শেষ ২৯ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। একাদশের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরদিনই দ্বাদশ সংসদের মেয়াদ শুরু হচ্ছে।
অধিবেশনের প্রথমদিনে সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে একই পদে মনোনীত করেছে। ফলে তাঁরা আবারও নির্বাচিত হবেন।
রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংসদের প্রথম বৈঠকে ভাষণ দেবেন।
প্রথম অধিবেশন সংসদ থেকে সরাসরি দেখার জন্য বিদেশি কূটনীতিকসহ বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদীয় কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হবে। এতে অধিবেশনের কার্যকাল ও আলোচ্যসূচি ঠিক করা হবে।
নতুন সংসদের সদস্যদের আসন বিন্যাস করা হয়েছে আগেই। প্রথমবারের মতো নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সংসদের কার্যক্রম বিষয়ে দুইদিনের ‘ওরিয়েন্টশন’ দেওয়া হয়েছে।
অধিবেশনকে কেন্দ্র করে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ এক বিজ্ঞপ্তিতে এই এলাকায় যান চলাচল সীমিত করেছে।
প্রথম দিন যা যা থাকছে :
প্রথম দিনের কার্যসূচিতে রয়েছে স্পিকার নির্বাচন, ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মনোনয়ন, শোকপ্রস্তাব ও রাষ্ট্রপতির ভাষণ।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের এটাই হবে সংসদে প্রথম ভাষণ। তাঁর ভাষণের পরই প্রথমদিনের বৈঠক মুলতবি করা হবে।
সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ভাষণই রাষ্ট্রপতি সংসদে পাঠ করেন।
গত ১৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই ভাষণ অনুমোদন করা হয়।
সংসদের চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী বলেন, ‘সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রস্তাবক ও সমর্থক কে হবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। অধিবেশনের শুরুতেই প্রথমে স্পিকার নির্বাচন করা হবে এবং তিনি সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেবেন। এরপর ডেপুটি স্পিকারের নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করা হবে। তারপর ডেপুটি স্পিকারকে শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি। সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন, শোকপ্রস্তাব শেষে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর অধিবেশন মুলতবি হবে।
মুলতবির পর পরবর্তী দিনের বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব আনা হবে। এরপর থেকে সেই প্রস্তাবের ওপর সংসদ সদস্যরা আলোচনা করবেন।
স্পিকারের প্রত্যাশা :
সংসদ অধিবেশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘অধিবেশনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সংসদের আসন বণ্টন হয়েছে। আমরা নতুন এমপিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। দ্বাদশ সংসদ প্রাণবন্ত হবে বলেও আশা করছি।’
সংসদ নেতা, উপনেতা, চিফ হুইপ ও হুইপ যাঁরা :
সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ নেতা ও দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দ্বাদশ সংসের সংসদ উপনেতার দায়িত্ব পালন করবেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নূর-ই আলম চৌধুরীকে দ্বাদশ সংসদের চিফ হুইপ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
ইকবালুর রহিম (দিনাজপুর-৩), আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন (জয়পুরহাট-২), নজরুল ইসলাম বাবু (নারায়ণগঞ্জ- ২), সাইমুম সরওয়ার কমল (কক্সবাজার -৩), এবং মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা (নড়াইল-২) কে হুইপ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতা :
সংসদে সরকারের বিরোধীতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠিত দলের নেতা হিসেবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বিরোধী দলের নেতা ও দলের কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে বিরোধী দলীয় উপনেতার স্বীকৃতি দিয়েছেন স্পিকার।
জাতীয় পার্টি তাঁর মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুকে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদকে বিরোধী দলীয় হুইপ মনোনীত করেছে।
স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন যেভাবে :
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সংসদের প্রথম বৈঠক শুরুর অন্তত এক ঘণ্টা আগে সংসদ সচিবের কাছে স্পিকার হিসেবে কোনও সংসদ সদস্যের নাম প্রস্তাব করে লিখিত প্রস্তাব দেবেন অন্য কোনও সংসদ সদস্য।
যাঁর নাম প্রস্তাব করা হবে, সেখানে তাঁর সম্মতি থাকতে হবে। ওই প্রস্তাবে তৃতীয় কোনও সংসদ সদস্যের সমর্থনও থাকতে হবে।
স্পিকার হিসেবে কেউ তাঁর নিজের নাম প্রস্তাব করতে পারবেন না, অন্য কেউ তাঁর প্রস্তাব করলে তা সমর্থনও করতে পারবেন না। কোনও সদস্য একাধিক ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করতে পারবে না।
কোনও ব্যক্তি তাঁর নিজের নির্বাচনকালে অধিবেশনে সভাপতিত্ব করতে পারবেন না।
একাধিক প্রস্তাব উত্থাপিত হলে ক্রমানুসারে ভোটে দেওয়া হবে, প্রয়োজনে বিভক্তি-ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোনও প্রস্তাব গ্রহণ হয়ে গেলে সভাপতি বাকি প্রস্তাবগুলো ভোটে না দিয়ে ঘোষণা করবেন যে, স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন।
একাদশ সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে আওয়ামী লীগ আবার নির্বাচিত করবে বলে ঘোষণা দেওয়ায় মঙ্গলবার সংসদের বৈঠকের শুরুতে তিনি সভাপতিত্ব করতে পারবেন না। বৈঠকটি সভাপতিত্ব করবেন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু।
স্পিকার নির্বাচিত হলে সংসদের বৈঠক ২০ মিনিটের জন্য বিরতি দেওয়া হবে।
এ সময় নতুন স্পিকারকে শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
শপথ শেষে নতুন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মুলতবি বৈঠক শুরু হবে।
এ সময় শুরুতেই ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করা হবে। স্পিকারের মতো ডেপুটি স্পিকারও একই পদ্ধতিতে নির্বাচিত করা হবে।
আসন বিন্যাস :
সরকারি দলের প্রথম সারিতে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশের আসনটি সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং তার পরের আসনটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে।
প্রথম সারিতে আসন পেয়েছেন তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদ, সড়ক পরিবহন এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সংসদ নেতার পেছনের সারির প্রথম আসনটি সরকারি দলের চিফ হুইপ নুর-ই- আলম চৌধুরীর।
বিরোধীদলীয় নেতার আসন জি এম কাদের এবং উপনেতার আসন আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে দেওয়া হয়েছে।
বিরোধীদলীয় উপনেতার পাশের আসনটি রুহুল আমিন হাওলাদার এবং তার পরের তিনটি আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে স্বতন্ত্র আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননকে।
বিরোধী দলীয় নেতার পেছনের সারির প্রথম আসনে বিরোধী দলের চিফ হুইপ মজিবুল হক চুন্নু বসবেন।
বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের আশপাশে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের আসন দেওয়া হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের ২২২ জন, জাতীয় পার্টির ১১ জন, জাসদের ১ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ১ জন, কল্যাণ পার্টির ১ জন এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রয়েছেন ৬২ জন।