কুড়িগ্রামের লটকন রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

কুড়িগ্রামের লটকন রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলা কাগজ; শাহীন আহমেদ, কুড়িগ্রাম : সুস্বাধু এ ফলের দিকে তাকালেই জিভে জল এসে যায়। এর স্বাদ পান নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। ফলটির নাম লটকন। কুড়িগ্রাম জেলায় এবার ব্যাপকহারে চাষ করা হয়েছে লটকনের। কিন্তু ফলন বিপর্যয়ের কারণে কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাজ পরলেও এবার দ্বিগুণেরও বেশি দাম পাওয়ায় তাঁদের মুখের ‘চওড়া হাসি কপাল পর্যন্ত’ ঠেকেছে। আর এ লটকন বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ এই ফল চাষ করতে লাগে না কোনও ক্ষতিকর রাসায়নিক সার বা কীটনাশক। একটু যত্ন এবং আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে পারলেই প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যায়। এই ফলের প্রধান শত্রু পিঁপড়া ও আঁচা পোকা। তাদের থেকে দূরে থাকতে হলে একটু ডালপালা ছাটাই করতে হবে, সময়মতো স্প্রে ও সার দিতে হয়। তাহলেই পিঁপড়া ও আঁচা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 

কুড়িগ্রাম জেলায় প্রায় ৭ থেকে ৮ শতাধিক কৃষক লটকন চাষে সম্পৃক্ত বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। আর এই ব্যবসার সঙ্গে প্রায় অর্ধশত ব্যাপারী জড়িত বলে জানা গেছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের সন্নাসী গ্রামের কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, কুড়িগ্রাম জেলার লটকনের চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। এখানকার লটকনের স্বাদ, আকার ও মান ভালো হওয়ায় প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারেরা ছুটে আসেন এখানকার লটকন কিনতে। এবার লটকনের মণ ২ হাজার ৬ শ টাকা থেকে ৩ হাজার ২ শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এবার লটকনের ফলন ভালো হয় নি। ফলন ভালো হলে চাষীরা প্রচুর পরিমাণে লাভবান হতো।

একই এলাকার শিবরাম গ্রামের চাষী জয়নাল মিয়া বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি ১১ থেকে ১২টা দেশে আম রপ্তানি হয়। দেশের বাইরে লটকনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষি বিভাগ ও সরকার যদি চেষ্টা করতো, তাহলে দেশের লটকন বাইরে বিক্রি করে আমরা লাভবান হতে পারতাম। তবে আমাদের কষ্টের জায়গা হলো, স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তাঁরা এই সেক্টরটিকে ঠিকমতো দেখভাল করেন না। এর কারণে প্রায় সময় ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েন চাষীরা। তখন পরামর্শ দেওয়ার মতো কাউকে পাওয়া যায় না।’

কাঁঠালবাড়ী বাজারের পাইকার ও দেবালয় গ্রামের তাজুল ইসলাম বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘আগে আমরা নিজেরাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে গিয়ে লটকন বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন সবকিছুতে মূল্যবৃদ্ধির কারণে সেটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।’ 

‘এ ছাড়া লটকন সংগ্রহ করতে শ্রমিকদের ১ শ টাকা দিলেই হতো। এখন দিতে হচ্ছে ৪ শ টাকা করে। ফলে আমরা আগের তুলনায় কম লাভবান হচ্ছি। আর সব খাতে সরকার অনুদান দিলেও এই খাতে কোনও অনুদান দেওয়া হয় না।’

সিরাজগঞ্জ থেকে লটকন কিনতে আসা পাইকার আব্দুল কুদ্দুস বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘এখানকার লটকন খুব সুস্বাধু, দামও তুলনামূলক কম। নরসিংদীর লটকন ৩ হাজার ৫ শ টাকা মণ। এখানকার লটকন ৩ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে।’ 

‘এখানকার লটকন কিনতে ঢাকা, বগুড়া, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিলেট, যশোর, বরিশাল, কুয়াকাটা ও ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসেছে।’

সার্বিক ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামসুজ্জামান বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার মধ্যে সদর উপজেলা, রাজারহাট, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও উলিপুর উপজেলায় লটকন চাষ করা হয়। বিশেষ করে সুপারি গাছের সঙ্গে এই লটকন অল্প খরচে চাষ করে কৃষকরা লাভবান হন। তবে তাঁরা যদি একটু যত্নবান হতেন, আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতেন, তাহলে এই খাত থেকে তাঁরা প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারতেন। 

তিনি আরও জানান, প্রাপ্যতা ও মান অর্জন করতে পারলে লটকন বিদেশে পাঠিয়ে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।