অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলনের মহোৎসব : হুমকিতে তীর সংরক্ষণ প্রকল্প
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ; রৌমারী (কুড়িগ্রাম) : ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। সারা বছর বিভিন্ন নদ-নদী ও ফসলি জমিতে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন হচ্ছে। এতে ভাঙনের শিকার হচ্ছে শতশত হেক্টর আবাদি জমি, নদী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে। উপজেলার নদ-নদীসহ ৫৩টি পয়েন্টে শতাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এতে হুকমিতে রয়েছে সরকারের ২৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ব্রহ্মপুত্রের বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প। কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার ঘটনা এটি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসন ও পাউবো কর্মকর্তাদের নিরবতায় বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, রাজীবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের মেম্বারপাড়া থেকে মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের মোহনগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ১৪টি প্যাকেজে মোট ব্যয় ধরা হয় ২৪০ কোটি টাকা।
রাজীবপুরের সরকারের কোনো বালুমহাল নেই। তবে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজীবপুর উপজেলার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ চলমান। ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ ও আরসিসি ব্লক। এই প্রকল্প ঘেঁষে মেম্বারপাড়া, মুন্সিপাড়া, রাজীবপুর নৌকাঘাট, চরনেওয়াজি, নয়ারচর, শিকারপুর, দিয়ারার চর এলাকায় সারি সারি ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম রাজীবপুর করাতিপাড়া এলাকায় পাঁচটি, বালিয়ামারী জিঞ্জিরাম নদীতে তিনটি, সোনাভরী নদীর মদনেরচর, বদরপুর ও ফাটকপাড়ায় সাতটি, কোদালকাটি ইউনিয়নের সোনাভরী নদীর আনন্দবাজার, চরসাজাই মন্ডলপাড়া এলাকায় চারটি, শংকর মাধবপুর বিলপাড়ায় তিনটি, পাখিউড়া বাজারের পাশে ছয়টি, উত্তর কোদালকাটি ব্রহ্মপুত্র নদের দু'পাশে সাতটিসহ ৫৩টি পয়েন্টে শতাধিক অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে হুমকিতে রয়েছে সরকারের কয়েকশ কোটি টাকার তীর সংরক্ষণ প্রকল্প।
উপজেলার সদর ও মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের নদীপাড়ের বাসিন্দা জিয়াউর রহমান, সাহেব আলী, আব্দুর রশিদ, ছানোয়ার হোসেন, শাহআলম, রেজাউল করিমসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে রাত-দিন বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র, দেখার কেউ নেই। ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের শত কোটি টাকার তীর সংরক্ষণ প্রকল্প। প্রতিবছর বন্যায় দেখা দেয় তীব্র ভাঙন। বর্ষা মৌসুমে নদীর গর্ভে ভেঙে যাবে বসতভিটা ও আবাদি জমি। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বগুড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘অপরিকল্পিতিভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়। এতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। বসতবাড়ি, আবাদি জমি নদীতে বিলিন হয়ে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটায়।’ এ থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে তিনি বলেন, ‘সরকারিভাবে নির্দিষ্ট জায়গায় বালুমহাল ঘোষণা করতে হবে এবং নদীর পথ সচল রাখতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা যেতে পারে। তবে এর আশপাশে কোনো বসতবাড়ি বা কোনো স্থাপনা থাকা যাবে না।’
নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘বালু উত্তোলনের ব্যবহৃত সব ড্রেজার মেশিন ভেঙে এবং পুড়িয়ে ফেলতে সকল ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাদের (তহশীলদার) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এসব অবৈধ ড্রেজার মেশিন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’