ডন প্রতিবেদক, রাজশাহী : প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক দীর্ঘ ১৯ দিনের চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে বাড়ি ফেরার অনুমতি দেয় বলে জানিয়েছেন হাসান আজিজুল হকের ছেলে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইমতিয়াজ হাসান।
ইমতিয়াজ হাসান আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে বলেন, তাঁর বাবা এখন শঙ্কামুক্ত। তিনি যেসব বড় ধরনের জটিলতা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন, তা কেটে গেছে। বর্তমানে যে ধরনের ছোটখাটো শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তা বাড়ি থেকেই চিকিৎসা চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাই তাঁকে আজ বাড়িতে নেওয়া হচ্ছে। এখন তাঁরা আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে করে আসছেন। ঢাকা-রাজশাহীর মাঝরাস্তায় আছেন। সন্ধ্যার আগেই তাঁরা রাজশাহী পৌঁছে যাবেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এক মাস ধরে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক অসুস্থ হয়ে বাসায় ছিলেন। করোনার কারণে বাসায় রেখেই চলছিল তাঁর চিকিৎসা। বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছাড়াও আগে থেকেই তাঁর হার্টে সমস্যা, ডায়াবেটিস ছিল। তাঁর শরীরে লবণের ঘাটতিও ছিল। করোনার কারণে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। চিকিৎসকের পরামর্শমতো বাড়িতেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। এ ছাড়া বাসাতেই তাঁর ইসিজি করানো হয়েছে। তিনি একবার পড়ে গিয়েছিলেন। সে জন্য এক্স-রে করানো হয়েছে। সেখানে হালকা ফ্র্যাকচার ধরা পড়েছে। এসব কারণে তিনি ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলেন।
গত ১৬ আগস্ট তাঁর ছেলের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তাঁর অসুস্থতার কথা প্রথম জানা যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ২১ আগস্ট এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে প্রথমে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়, পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সেই দিন রাতে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। তাঁকে এই হাসপাতালে আনার পরদিন ২২ আগস্ট বিএসএমএমইউর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ আরাফাতকে প্রধান করে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এই মেডিকেল বোর্ডের অধীনেই তাঁর চিকিৎসা চলছে।
হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজশাহীতে কাটিয়েছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন। এরপর থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে নগরের চৌদ্দপায় এলাকার আবাসিক এলাকায় বসবাস করে আসছেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য হাসান আজিজুল হক ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করে। ২০১৯ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়।