গণমাধ্যমকর্মীদের স্বার্থ সুরক্ষায় প্রস্তাবিত আইন সংসদে।
ডন প্রতিবেদন : গণমাধ্যমকর্মী ও মালিকপক্ষেরমধ্যে বিরোধ নিরসনে গণমাধ্যম আদালত স্থাপনের বিধান রেখে নতুন একটি আইন করছে সরকার। এতে আদালত স্থাপনের পাশাপাশি বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির বিধানও রাখা হয়েছে। এ সংক্রান্ত ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) বিল-২০২২’ গতকাল সোমবার (২৮ মার্চ) জাতীয় সংসদে তোলা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই আইনে মাসের প্রথম সাত কর্মদিবসেরমধ্যে বেতন পরিশোধ করা, গণমাধ্যমকর্মীর সংজ্ঞা, সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা, মজুরি বোর্ড গঠন, চাকরিচ্যুত করার বিধান, চাকরির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ইত্যাদি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রতি পাঁচ বছর পরপর গণমাধ্যমকর্মীদের ন্যূনতম ওয়েজ বোর্ড গঠন করা হবে। মালিকপক্ষ ন্যূনতম বেতন হারের কম বেতন দিলে এক বছরের জেল বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। বিলে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমকর্মীরা সপ্তাহে অন্যূন ৪৮ ঘণ্টা কাজ করবেন। এর বেশি কাজ করাতে চাইলে ওভারটাইম ভাতা দিতে হবে। কোনও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত কর্মী ছাঁটাই করতে চাইলে মালিকপক্ষ তা করতে পারবে। সেক্ষেত্রে বিষয়টি সরকারকে দ্রুত লিখিতভাবে জানাতে হবে। ছাঁটাই করতে হলে কর্মীকে এক মাসের লিখিত নোটিশ দিতে হবে অথবা এক মাসের মূল বেতন দিতে হবে। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতিবছর চাকরির জন্য ৩০ দিনের মূল বেতন দিতে হবে। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। পরে বিলটি ৬০ দিনেরমধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমকর্মীদের ন্যূনতম ওয়েজ বোর্ড প্রতি পাঁচ বছর পরপর গঠিত হবে। ওয়েজ বোর্ড সংবাদপত্র, সংবাদ সংস্থা, বেসরকারি টেলিভিশন, বেতার ও নিবন্ধিত অনলাইন মাধ্যমের জন্য প্রয়োজনে পৃথক পৃথক বেতনকাঠামো নির্ধারণ করবে। প্রস্তাবিত আইনে বলা আছে, গণমাধ্যমে পূর্ণকালীন কর্মরত সাংবাদিক, কর্মচারী এবং নিবন্ধিত সংবাদপত্রের মালিকানাধীন ছাপাখানাসহ নিবন্ধিত অনলাইন গণমাধ্যমে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ‘গণমাধ্যমকর্মী’ বলা হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের তিনটি বিভাগ করা হয়েছে এই বিলে। সেগুলো হলো অস্থায়ী বা সাময়িক, শিক্ষানবিশ এবং স্থায়ী। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, সরকার এক বা একাধিক বিভাগীয় এলাকার জন্য গণমাধ্যম আদালত স্থাপন করতে পারবে। এই আদালতের একজন চেয়ারম্যান এবং দুজন সদস্য থাকবেন। কর্মরত জেলা জজদের মধ্যে একজন চেয়ারম্যান হবেন। দুই সদস্যের একজন গণমাধ্যম মালিক, আরেকজন গণমাধ্যমকর্মী হবেন। গণমাধ্যম আদালত ফৌজদারি কার্যবিধিতে বর্ণিত সংক্ষিপ্ত বিচারপদ্ধতি অনুসরণ করবে। প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর ন্যস্ত সব ক্ষমতা গণমাধ্যম আদালতেরও থাকবে। বিলে গণমাধ্যম আপিল আদালতেরও বিধান রাখা হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারক বা অতিরিক্ত বিচারক এর চেয়ারম্যান হবেন। চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য সরকার এক বা একাধিক সদস্য নিয়োগ করতে পারবে। সদস্যরা হবেন ৩ বছর কর্মরত আছেন বা ছিলেন এমন জেলা জজদের মধ্য থেকে। বিলে বলা হয়েছে, গণমাধ্যম আদালতের আদেশ পালন করতে অস্বীকার করলে বা ব্যর্থ হলে তিন মাসের জেল বা অনূর্ধ্ব পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা হবে। আবার কোনও গণমাধ্যমকর্মী আদালতে মিথ্যা বিবৃতি দিলে তাঁর ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের জেল হবে। গণমাধ্যম মালিক মিথ্যা বিবৃতি দিলে অনূর্ধ্ব পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা তিন মাসের কারাদণ্ড হবে। বিলে বলা হয়েছে, গণমাধ্যকর্মী ও মালিকপক্ষের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও কর্মীদের কল্যাণে গণমাধ্যম কল্যাণ সমিতি গঠন করা যাবে। এই সমিতির প্রতিনিধিরা বিরোধ নিষ্পত্তিকারী প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য হবেন। মালিকের পক্ষ থেকে অন্যায় আচরণ হলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের জেল হবে। বিলে বলা হয়েছে, এক বছর চাকরিরত অবস্থায় কোনও গণমাধ্যমকর্মী মারা গেলে মৃতের মনোনীত ব্যক্তি বা তাঁর উত্তরাধিকারীকে কর্মীর প্রতি পূর্ণ বছর বা ছয় মাসের বেশি সময় চাকরির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ দিনের এবং কর্মকালীন দুর্ঘটনার কারণে ৪৫ দিনের বেতন দিতে হবে।