লোডশেডিংয়ে সরকারের আসল চেহারা বেরিয়ে আসছে : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিদ্যুৎ খাতে সীমাহীন দুর্নীতির কারণে নজীরবিহীন লোডশেডিংয়ে সরকারের আসল চেহারা বের হয়ে আসছে। রোববার (৯ অক্টোবর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কুইক রেন্টাল, ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ছয় মাস আগে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কথা বলে শত শত কোটি টাকা খরচ করে তথাকথিত সাফল্য উৎসব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বলছেন, ভেন্না ও রেড়ির তেল দিয়ে ঘরে ঘরে কুপি,মাটির প্রদীপ এবং হারিকেন জ্বালানোর প্রস্তুতি নিতে বলছেন। এখন ছুটির দিনেও অসহনীয় লোডশেডিং চলছে সারাদেশে। অন্ধকারাচ্ছন্ন পথে দেশ। এটা (লোডশেডিং) তো ওরাই (সরকার) বলেছে যে, এটাকে নাকি জাদুঘরে নিয়ে গেছে। কিন্তু জাদুঘরে থাকা লোডশেডিংয়ের কঙ্কাল জীবন্ত হয়ে এখন নৌকার ওপর নাচানাচি করছে। বিদ্যুৎ খাতের দিকে তাকিয়ে সরকারের কথিত উন্নয়নের কংকালসার চেহারার অভ্রাংশ অনুধাবন করতে পারছে মানুষ।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন নয়, নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে নতুন কমিশনের অধীনেই আগামী নির্বাচন হতে হবে এমনটা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, মানুষকে বিভ্রান্ত করে সরকার তাদের নীলনকশা বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে। এক্ষেত্রে সরকার নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করছে। গুম, খুন আর মামলা দিয়ে, নির্যাতন করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখেছে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রতিহিংসামূলক মামলাকে বিরোধী দল দমনে বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার। তিনি বলেন,আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে হিন্দু সম্প্রদায় বেশি নির্যাতিত হয়। আওয়ামী লীগ নিজেরা অন্যায় করে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপায়।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোট ডাকাতির পথে নেমেছে আওয়ামী লীগ সরকার উল্লেখ করে রিজভী বলেন,বাংলাদেশে শেখ হাসিনার অধীনে আর কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।তিনি বলেন, সরকারের সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়া হচ্ছে। বিএনপির চলমান কর্মসূচির কথা জানিয়ে রিজভী বলেন, আন্দোলনে এরমধ্যে পাঁচ জনের প্রাণ গিয়েছে। এরপরও কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে। ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে আন্দোলন চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাবে।
এ সময় সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘গত ১৪ বছর ধরে গণতন্ত্রকামী মানুষকে গুম-খুন-অপহরণ করে, হামলা মামলা নির্যাতন আর বিরোধী দলের সভা সমাবেশে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করে ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছে রাতের সরকার। ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগেই সরকার গঠনের জন্য বিনা ভোটে ১৫৪ জনকে এমপি ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের নামে প্রহসনের ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতেই অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত নিশিরাতে জনগণের ভোট ডাকাতি করে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে আওয়ামী লিগ অবৈধভাবে গঠন করে রাতের সরকার। আর অবৈধভাবে টিকে থাকতে গিয়ে গুম, ক্রসফায়ার ও প্রতিহিংসামূলক মামলাকে বিরোধী দল দমনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারো আওয়ামী লীগ এবং তাদের পোষ্য বিশিষ্টজন’রা ভোট ডাকাতির জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অতীতের ভোট ডাকাতির তিনটি জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের মধ্যে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে যেসব ভয়ংকর পন্থা অবলম্বন করেছিল এখন সেই একই পথে নেমেছে সরকার। দমন পীড়ন, মধ্যরাতে তুলে নিয়ে যাওয়া, গুম-খুন-জঙ্গী নাটক শুরু করেছে। কথা বলার অধিকার এবং সত্য প্রকাশ বন্ধের জন্য নতুন নতুন ফরমান জারি করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে আইন করে দূর্নীতিকে আড়াল করতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ রাষ্ট্রের ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টির জন্যই এই পরিপত্র জারি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাথে তাদের আত্মা বিক্রি করা সহযোগীরা ভোট ডাকাতির জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে। লেখা-লেখি ও বিবৃতিবাজির মাধ্যমে সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য বানানোর লিপ্ত হয়ে আওয়ামী লীগকে ক্রমাগত চোরাবালির মধ্যে ডুবিয়ে দিচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে জনগণের টাকায় পরিচালিত প্রচার মাধ্যমগুলোকে সরকার আওয়ামী লীগের দাপ্তরিক প্রচারযন্ত্রে পরিণত করেছে।
কেরাণীগঞ্জে হিন্দুদের প্রতিমা বিসর্জনে বাধা দেওয়ার নিন্দা : রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বিজয়া দশমীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিমা বিসর্জনে বাধা দেওয়া। এরপর উল্টো মিথ্যা অভিযোগ এনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত বুধবার রাতে দূর্গাপূজা শেষে বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার সময় তুচ্ছ ঘটনার জেরে র্যাব সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগারদের তর্ক-বিতর্ক হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী ক্যাডাররা অবরোধ করে বলে যে, র্যাবের সদস্যরা ক্ষমা না চাইলে তারা প্রতিমা বিসর্জন দিতে দেবে না। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে এবং হিন্দুদের ধর্মীয় রীতি পালনে বাধা ও ভয়ভীতি সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার আগানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর শাহ খুশী দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মিথ্যা অভিযোগ এনে নিপুণ রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে সাধারণ ডায়েরি করেছে আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির খায়রুল কবির খোকন, মীর সরাফত আলী সপু, আবদুল খালেক, নিপুণ রায় চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন মাস্টার, শাহ নেছারুল হক, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।