পাকিস্তানের রিজার্ভে মিটবে না তিন সপ্তাহের আমদানি ব্যয়ও
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে (বেলআউট) আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যেসব শর্ত দিয়েছে, তা ধারণাতীত বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তবে তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তান সরকারকে তা মেনে নিতে হবে।’
শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) এসব কথা বলেন তিনি।
এদিকে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও কমেছে বলে জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এই অর্থ দিয়ে তিন সপ্তাহও আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে আইএমএফের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের আলোচনা গত কয়েক মাস ধরে স্থবির হয়ে ছিলো। সম্প্রতি স্থবিরতা কাটিয়ে আবারও আলোচনা শুরু করে দুই পক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তানে পৌঁছায়।
পাকিস্তানকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত বেঁধে দিয়েছে আইএমএফ। এসবের মধ্যে আছে কর বাড়ানো ও ভর্তুকি কমানো। তবে দেশটি শর্তগুলো মানতে রাজি হচ্ছে না। সরকারের আশঙ্কা, আগামী অক্টোবরের নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের সিদ্ধান্ত জনগণের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘আমি বিস্তারিত প্রসঙ্গে যাচ্ছি না। শুধু বলব, আমরা অকল্পনীয় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি। আইএমএফের যে শর্তগুলো আমাদের মানতে হবে তা ধারণাতীত। তবে আমাদের শর্তগুলো মেনে নিতে হবে।’
ডলার–সঙ্কটে দীর্ঘদিন ধরে ঋণ পরিশোধসহ বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য রাখতে পারছে না পাকিস্তান। আর্থিক পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে ২০১৯ সালে পাকিস্তানকে ৬০০ কোটি ডলার ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় আইএমএফ। দেশটিতে গত বছর বন্যার পর আরও ১০০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার কথা জানায় সংস্থাটি। তবে আর্থিক খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে ব্যর্থ হওয়ায় গত নভেম্বরে সেই অর্থ বিতরণ স্থগিত করে আইএমএফ।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার বলেছে, তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও কমে ৩১০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ রিজার্ভ দিয়ে তিন সপ্তাহও আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে না।
গত বুধবার এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পাকিস্তানের বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৪৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় পাকিস্তানি নাগরিকেরা মৌলিক খাদ্যদ্রব্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। দেশটিতে ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মান রেকর্ড পর্যায়ে কমেছে। জরুরি খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধ ছাড়া এখন আর কোনও পণ্যের জন্য ঋণপত্র ইস্যু করছে না পাকিস্তান।
২০১৯ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আইএমএফের কাছ থেকে ঋণসহায়তা পাওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করেছিলেন। তবে তিনি ভর্তুকি কমানোর মতো প্রতিশ্রুতিগুলো ফিরিয়ে নেন। এতে আলোচনা স্থবির হয়ে পড়ে। পরে গত বছর ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি।
পাকিস্তানে আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি হওয়া ও তা ভেঙে যাওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। কয়েক দশক ধরে সংস্থাটির সঙ্গে পাকিস্তানের ২৪টির বেশি চুক্তি ভেস্তে গেছে।