বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কখনোই হারে নি আর্জেন্টিনা
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : কাতার বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল মাঠে গড়াচ্ছে আজ মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে। ফাইনালে ওঠার লড়াই মুখোমুখি হচ্ছে টুর্নামেন্টের অন্যতম হট ফেভারিট আর্জেন্টিনা এবং গত আসরের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া। ফিফা র্যাংকিংয়ে ক্রোয়েশিয়া থেকে ৯ ধাপ এগিয়ে আলবিসেলেস্তেরা। মেসিদের বর্তমান র্যাংকিং ৩।
আজ বাংলাদেশ সময় রাত একটায় কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে গড়াবে হাইভোল্টেজ ম্যাচটি। আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়ার এ লড়াই সরাসরি দেখা যাবে বিটিভি, গাজী টিভি ও টি-স্পোর্টেস।
বিশ্বকাপ আসরে এটি আর্জেন্টিনার পঞ্চম সেমিফাইনাল। এর আগেও চারটি সেমিফাইনাল খেলেছে তাঁরা। যেখানে কখনই হারে নি আলবিসেলেস্তেরা। বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম আসর ১৯৩০ সালেই সেমিফাইনালে অংশ নেয় আর্জেন্টিনা। এরপর ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপ, ১৯৯০ সালের ইতালি বিশ্বকাপ এবং ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপ।
১৯৭৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুললেও সেবারের টুর্নামেন্টের ফরম্যাটটা ছিলো ভিন্নরকম। আর্জেন্টিনায় হওয়া সে বিশ্বকাপে প্রথমে ১৬টা দল ৪ গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলে। সেই চার গ্রুপের আট দল আবার দ্বিতীয় রাউন্ডে দুই গ্রুপে ভাগ হয়। এই দুই গ্রুপের সেরা দুই দল খেলে ফাইনাল।
উরুগুয়ে বিশ্বকাপ, ১৯৩০ (আর্জেন্টিনা-যুক্তরাষ্ট্র) :
১৯৩০ সালে ল্যাটিনের দেশ উরুগুয়েতেই বসেছিলো ফুটবল বিশ্বকাপের প্রথম আসর। আশ্চর্য শোনালেও সেবার যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বকাপে ফেভারিট হিসেবে অনেকেই গণ্য করেছিলো। শেষ চারের লড়াইয়ে মুখোমুখি হওয়ার আগে তাঁরাই ছিলো এগিয়ে। তবে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে যুক্তরাষ্ট্র হেরে যায় ৬-১ গোলের বড় ব্যবধানে। আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করেন লুইস মন্তি, আলেহান্দ্রো স্কোপেয়ি, গিলের্মো স্তাবিলে ও কার্লোস পেকুসেয়ে।
মেক্সিকো বিশ্বকাপ, ১৯৮৬ (আর্জেন্টিনা-বেলজিয়াম) :
ম্যারাডোনার অনবদ্য পারফরম্যান্সে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা নিজেদের ঘরে তোলে আর্জেন্টিনা। তার আগে অবশ্য সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের কাছে পরীক্ষা দিতে হয় দিয়াগো ম্যারাডোনার দলকে। অনন্য ফুটবল প্রদর্শনীতে সেদিন ২-০ গোলের জয় পায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৫২ ও ৬৩ মিনিটে দুটি গোল করেন ম্যারাডোনা। সেবারই বিশ্বকাপ ইতিহাসে সেরা একক পারফরম্যান্স করেছিলেন ম্যারাডোনা।
ইতালি বিশ্বকাপ, ১৯৯০ (আর্জেন্টিনা-ইতালি) :
পরের আসরেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলে আর্জেন্টিনা। তার আগে সেমিফাইনালে স্বাগতিক ইতালির কাছে পরীক্ষায় পড়তে হয়। নির্ধারিত ও ইনজুরি টাইমে ইতালি ও আর্জেন্টিনার স্কোর ১-১ গোলে সমতা থাকায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক গয়কোচিয়ার বীরত্বে ৪-৩ গোলের জয় তুলে নেয় আলবিসেলেস্তেরা। যদিও ফাইনালে গিয়ে বিতর্কিত পেনাল্টির কারণে জার্মানির কাছে শিরোপা হাতছাড়া হয় তাঁদের।
ব্রাজিল বিশ্বকাপ, ২০১৪ (আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস) :
ব্রাজিলের করিন্থিয়াস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডস ও আর্জেন্টিনার ম্যাচটি ছিলো গোলশূন্য সমতায়। ইনজুরি টাইমেও কোনও দলই গোলমুখ খুলতে পারে নি। সেবার পুরো ম্যাচেই নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন লিওনেল মেসি। তাই দু দলের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব বর্তায় টাইব্রেকারে। সেখানে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরোর অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে ৪-৩ গোলের জয় নিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে আলবিসেলেস্তেরা। রোমেরো যেনো সেদিন গয়কোচিয়া হয়ে উঠেছিলেন। তবে ফাইনালে একেবারে শেষ মুহূর্তে মারিও গোৎরে গোলে ১৯৯০ সালের পর আরও একবার জার্মানির কাছে শিরোপা হারাতে হয় আর্জেন্টিনাকে।
সবমিলিয়ে এবার দীর্ঘ আট বছর পর আবারও সেমিফাইনাল খেলবে আর্জেন্টিনা। দলটির সেরা তারকা লিওনেল মেসির দ্বিতীয় সেমিফাইনাল এটি। পূর্বের সবগুলো সেমিতে জয় পাওয়া আর্জেন্টিনা এবারও তাঁদের ধারা অব্যাহত রাখবে বলেই প্রত্যাশা সমর্থকদের।