অগ্রণী ব্যাংকের জরিমানা মওকুফের আবেদন নাকচ।
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : সিআইবি (ঋণ খেলাপি তথ্য সংক্রান্ত ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) রিপোর্টে গ্রাহকের খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করেছিলো অগ্রণী ব্যাংক। এজন্য ব্যাংকটিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এই জরিমানা মওকুফের আবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪২৩তম বোর্ড সভায় নাকচ করা হয়েছে। পাশাপাশি অগ্রণী ব্যাংকে ডলি কনস্ট্রাকশনের মাধ্যমে সংগঠিত অনিয়মের জরিমানা পুনর্বিবেচনার আবেদনও প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার (১ আগস্ট) অনুষ্ঠিত আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার বোর্ড সভা শেষে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালকেরা।
বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, গম-ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুনঃ অর্থায়ন গঠনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অন্যদিকে নাকচ করা হয়েছে পরিসংখ্যান বিভাগের উপ-পরিচালক প্রণব কুমার বর্মনের চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদনও।
সূত্র জানায়, সিআইবি রিপোর্টে গ্রাহকের খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করায় অগ্রণী ব্যাংককে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ডলি কনস্ট্রাকশনের অনিয়মের ব্যাপারে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সূত্রমতে, অগ্রণী ব্যাংক থেকে ডলি কনস্ট্রাকশনের অনিয়ম করে নেওয়া ঋণের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নির্দেশনার ১০ মাস পার হলেও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই ব্যাংককে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মোট ৩২৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকার দুটি ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে ডলি কনস্ট্রাকশন ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক থেকে ১৪০ কোটি ১৩ লাখ টাকা তুলেছে। নিয়ম অনুযায়ী, ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে এই পরিমাণ টাকা তুলতে কোম্পানিটির অন্তত ২৮০ কোটি ২৬ লাখ টাকা বা ওয়ার্ক অর্ডার দুটির ৮৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ করার কথা। তবে ওই সময় পর্যন্ত বাস্তবে ডলি কনস্ট্রাকশন শেষ করেছিলো মাত্র ৩৫ শতাংশ।
অর্থাৎ, কোম্পানিটি ১১৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকার কাজ শেষ করেই অগ্রণী ব্যাংক থেকে ১৪০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, এই পরিমাণ কাজের বিপরীতে ডলি কনস্ট্রাকশন ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৫৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা তুলতে পারে। সে হিসাবে, কোম্পানিটি অনিয়ম করে ব্যাংক থেকে ৮২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত তুলে নিয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। ১১৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকার কাজ শেষ করার বিল ব্যাংকে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা জমা দিয়েছে মাত্র ৫১ কোটি ৬ লাখ টাকার। বাকি ৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বিলের বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের কাছে জানতে চাওয়া হলেও তাঁরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কিছুই জানায় নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়ার্ক অর্ডার দুটির মেয়াদ ২০২১ সালের ১৫ এপ্রিল শেষ হয়েছে। সেইসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের বর্ধিত মেয়াদও ফুরিয়েছে ২০২১ সালের ৬ জুন। এসব সময়সীমা শেষ হলেও ব্যাংকটি থেকে নেওয়া ১০৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ এখনো পরিশোধ করে নি ডলি কনস্ট্রাকশন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সীমান্ত নদী তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় এক ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে ১ শ কোটি টাকা ওভারড্রাফট সীমা অনুমোদন করেছিলো অগ্রণী ব্যাংক। তবে কোম্পানিটি ওই ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে টাকা না তুলে অন্য আরেকটি ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে এই টাকা তুলেছে। নিয়ম অনুযায়ী এটিও গ্রহণযোগ্য নয়।
এসব অনিয়ম তুলে ধরে ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট অগ্রণী ব্যাংককে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। দীর্ঘদিন এ আদেশ না মানায় চলতি বছরের ২০ এপ্রিল কোম্পানী আইন অনুযায়ী ‘ব্যাংকের বিরুদ্ধে কেনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না’ জানতে অগ্রণী ব্যাংককে আরেকটি চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে চিঠিতে ৭ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অথচ ২ মাস পার হলেও অগ্রণী ব্যাংক এসব চিঠির কোনও জবাবই দেয় নি। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্যাংকটিকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২৩ জুন ইস্যু করা জরিমানার এই চিঠিতে ইস্যুর তারিখ থেকে পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের ‘সাধারণ হিসাব- প্রধান কার্যালয়’- এ জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করার জন্য অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা জমা না করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে খোলা অগ্রণী ব্যাংকের চলতি হিসাব থেকে টাকা কেটে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।