রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে জালিয়াতি। আতাউর রহমান প্রধানের দুর্নীতির তদন্ত শুরু।

রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে জালিয়াতি। আতাউর রহমান প্রধানের দুর্নীতির তদন্ত শুরু।

ডন ডেস্ক : রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক খাতের সোনালী ব্যাংক। সবচেয়ে বড় এ ব্যাংকের যুক্তরাজ্য শাখায়ও জালিয়াতি করেছেন আতাউর রহমান প্রধান। অথচ সেই আতাউর রহমান প্রধানকেই এই সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে এই আতাউর রহমান প্রধানের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধানের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট নির্বাচনে দুর্নীতির মাধ্যমে ৪ কোটি টাকা খরচের অভিযোগ রয়েছে। আর তার তদন্তের অংশ হিসেবে তাঁর ব্যাংক হিসাবের বিভিন্ন তথ্য কয়েকটি ব্যাংকের কাছে চেয়েছে দুদক। এর আগে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল ইসলামের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের মামলার তদন্ত শুরু করে দুদক। সূত্র জানায়, আতাউর রহমান প্রধান যখন রূপালী ব্যাংকের এমডি ছিলেন, তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচিতও হন। তবে ওই নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৪ কোটি টাকা খরচ করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া অর্থ পাচার এবং ঋণ পুনঃতফশিলকরণে কমিশন আদায়সহ তাঁর বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের এমডি থাকা অবস্থাতেই আতাউর রহমান প্রধান নানা অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ- স্বজনপ্রীতি ও আঞ্চলিকপ্রীতি। এমডির বাড়ি উত্তরবঙ্গে হওয়ায় তিনি ‘উত্তরবঙ্গ সিন্ডিকেট’ গড়ে তুলেছেন। আর এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে চলছে বদলিবাণিজ্য, প্রমোশন-বাণিজ্য, সিএসআর, স্পন্সর ও বিজ্ঞাপন থেকে নামে-বেনামে টাকা বের করে নেওয়ার বাণিজ্য। সোনালী ব্যাংকের প্রভাবশালী ডিভিশনগুলোর প্রায় সবগুলোর প্রধানই এখন উত্তরবঙ্গের। এক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলেই জানা গেছে। বঞ্চিত এসব কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা থাকার পরও আমাদের অন্যায়ভাবে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন যোগ্য কর্মকর্তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন, অন্যদিকে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হিসেবে যে ভূমিকা রাখার কথা ছিলো তা রাখতে পারছে না।’ তবে স্বজনপ্রীতির ক্ষেত্রেও তিনি মানছেন না কোনও নিয়ম। সম্প্রতি এমডির এক ভাগ্নে জামাই নবাব হোসেনকে কোনও রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই সোনালী এক্সচেঞ্জ কোং ইনক., যুক্তরাষ্ট্র শাখায় পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। আরেক ভাগ্নে জামাই মো. সাইফুল ইসলামকে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে সৌদি আরবের জেদ্দা শাখায়। এসব ক্ষেত্রে পরীক্ষা ও যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়ার বিধান থাকলেও তাঁদের ক্ষেত্রে কিছুই দেখা হয় নি। সূত্রমতে, আতাউর রহমান প্রধান ব্যাংকিং নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে খেলাপি গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি টাকা কমিশন নিয়ে ঋণ পুনঃতফশিল করেছেন। এতে চরম ক্ষতিতে পড়েছে ব্যাংক। আবার সেই টাকা পাচার করে তিনি বিদেশে কিনেছেন বাড়ি। এজন্য রূপালী ব্যাংকের কাছে বেশকিছু নথিপত্র চেয়েছে দুদক। তারমধ্যে রয়েছে- ঢাবির সিনেট নির্বাচন উপলক্ষে খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের অফিস আদেশ ও নির্বাচন উপলক্ষে খরচের বিল, খুলনা শাখার গ্রাহক ক্রিসেন্ট জুট মিল এবং স্থানীয় শাখার গ্রাহক বিউটিফুল জ্যাকেট ও দি বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিসের সব ধরনের নথিপত্র। এ ছাড়া আতাউর রহমান প্রধান এমডি থাকাকালে রূপালী ব্যাংকে যতো কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে, সেই নথিও চেয়েছে দুদক। আতাউর রহমান প্রধান প্রায় ছয় বছর ধরে এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথমে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট রূপালী ব্যাংকের এমডি পদে দায়িত্ব পান। পরে ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট নতুন করে ৩ বছরের জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সবচেয়ে বড় ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব পান। অথচ দেশেরমধ্যে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা নেই, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের হয়েও অনেক কাজ করে থাকে সোনালী ব্যাংক। আর এমন ব্যাংকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আতাউর রহমান প্রধানকে। এক্ষেত্রে আতাউর রহমান প্রধান এলটিআর (বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঋণ), করপোরেট গ্যারান্টি এবং বেশকিছু ক্ষেত্রে চরম অনিয়ম ও জাল-জালিয়াতি করেছেন বলেই জানা গেছে।