অধ্যক্ষকে জুতার মালা : নড়াইলের ওই কলেজ খুলছে শনিবার।
নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; নড়াইল : নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ খুলছে শনিবার (১৬ জুলাই)। কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর ঘটনায় এটি বন্ধ হয়ে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কলেজের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচীন চক্রবর্তী বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, বুধবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায় কলেজের পরিচালনা পর্ষদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বুধবার আমাদের কলেজের পরিচালনা পর্ষদের একটি সভা হয়েছে। সেখানে কলেজ খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী শনিবার কলেজ খোলা হবে।’
‘এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কলেজের পরিচালনা পর্ষদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিলো। সেই নোটিশের জবাব দেওয়ার ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।’
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে স্বপন কুমারই আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরানোর কোনও আলোচনাই হয় নি।’
বরং তাঁকে ফুলের মালা দিয়ে কলেজে ফিরিয়ে আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন কলেজের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘পরিচালনা পর্ষদের সবাই মিলে স্বপন কুমার বিশ্বাসের কাছে যাবো। তাকে পুনরায় কলেজে আসার অনুরোধ করবো। আমাদের ইচ্ছা আছে, গ্রামের সব মানুষকে ডেকে নিয়ে ফুলের মালা গলায় দিয়ে তাঁকে আবারও কলেজে ফিরিয়ে আনবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বপন কুমার বিশ্বাস যদি নিজে থেকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান, তবুও আমরা তাঁকে আরও কিছু দিনের জন্য হলেও অধ্যক্ষের দায়িত্ব থাকার অনুরোধ করবো।’
ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে এক হিন্দু শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন- এমন অভিযোগ তুলে কলেজে পুলিশের সামনেই শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অপদস্থ করা হয়।
গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন স্বপন কুমার। মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে গত ১৮ জুন এ নিয়ে দিনভর চলে উত্তেজনা।
এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি।
শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাঁকে তুলে নেওয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দেশজুড়ে তৈরি হয় তীব্র ক্ষোভ।
কলেজে হামলা ও শিক্ষক হেনস্তার ঘটনার ৯ দিন পর গত ২৭ জুন দুপুরে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক ও মির্জাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মোরছালিন।
দণ্ডবিধির ৩৪, ১৪৩, ৪৪৭, ৪৪৮, ৩২৩, ৩৪১, ৩৩২, ৩৫৩, ৩৫৫, ৪৩৬, ৪২৭, ৫০০ ধারায় করা এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলো : কলেজটির শিক্ষার্থী রহমাতুল্লাহর রনি, মোবাইল ফোনের মেকানিক শাওন খান, অটোরিকশার চালক রিমন আলী, মাদরাসা শিক্ষক মনিরুল ইসলাম এবং শ্রমিক নূর-নবী। তাদের বাড়ি নড়াইল সদরের মির্জাপুর কলেজের আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে।
সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহামুদুর বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘ঘটনার দিন মনিরুল হ্যান্ড মাইকে উসকানিমূলক ঘোষণা দিয়েছিলেন। রিমন আলী স্থানীয়দের মধ্যে জনরোষ সৃষ্টি করেছিলেন এবং নূর-নবী কলেজ মাঠে গিয়ে নিজের গায়ের পাঞ্জাবি ছিঁড়ে সেখানে বেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন।’
‘এ ছাড়া রনি ও শাওন সরাসরি অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিয়েছিলেন। বর্তমানে তারা সবাই কারাগারে আছেন।’