কলাম : প্রচণ্ড দাবদাহে মানুষের পাশে পুলিশ

কলাম : প্রচণ্ড দাবদাহে মানুষের পাশে পুলিশ

আবুল খায়ের :: বৈশাখের খরতাপে কয়েক দিন ধরেই হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। অসহ্য গরম ও দাবদাহে জনজীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। এই তীব্র গরমে সাধারণ জনগণ, পথচারী, রিকশাচালকসহ বিভিন্ন পেশার খেটে খাওয়া মানুষের সবচেয়ে বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে। দাবদাহের ভয়ে তাঁরা যদি ঘরে বসে থাকেন, তাহলে তাঁদের সংসারের খরচ জোগাবে কে? এ কারণে প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে তাঁদেরকে ঘর থেকে বের হয়ে পরিশ্রম করতেই হচ্ছে।

আমরা যাঁরা অফিসে বসে কাজ করছি, কাজ শেষে অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় গেলে বুঝতে পারি যে, বাতাসে বইছে আগুনের হলকা। এর মধ্যেই রিকশাচালকরা রিকশা চালিয়ে যাত্রী আনা-নেওয়া করছেন। ফুটপাথের হকারদের অবস্থা আরো ভয়ঙ্কর। গরমের মধ্যে তাঁদের বেচাবিক্রি থেমে নেই। এই গরমে পিপাসার্ত পথচারীদের মধ্যে সুপেয় পানির ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ।

এই গরমে সাধারণ মানুষের পাশে পুলিশই থাকছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলির প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো পুলিশ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস যুদ্ধ করে সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য শহিদ হয়েছেন। সম্প্রতি করোনাকালীন যখন কেউ পাশে ছিলো না, তখন এই পুলিশই পাশে দাঁড়িয়েছে। লকডাউনে মানুষের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিয়েছে পুলিশ। করোনা আক্রান্ত রোগীকে যখন তাঁর রক্ত-সম্পর্কের স্বজনেরা ফেলে পালিয়েছে, তখন পুলিশই ওই রোগীকে নিজ দায়িত্বে চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে গেছে। করোনায় মৃত্যু হওয়ার পর লাশ দাফনের জন্য কেউ পাশে আসে নি। পুলিশই নিজ উদ্যোগে লাশ দাফন করেছে।

চলতি মাসে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যে তাপপ্রবাহ বইছে, সেটা আরও কয়েক দিন থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এই পরিস্থিতির মধ্যে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে খেটে খাওয়া শ্রমজীবীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। একটু স্বস্তি দিতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান রাস্তায় চলাচল করা সাধারণ মানুষের মানবিক সহায়তা হিসেবে বিভিন্ন থানা পুলিশকে সুপেয় পানি বিতরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ডিএমপি কমিশনারের উদ্যোগে পুলিশের ১৬ হাজার লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াটার ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুপেয় পানি বিতরণ করা হচ্ছে। মতিঝিল শাপলা চত্বর, পল্টন, গুলিস্তান মাজার, পুরোনো হাইকোর্ট ভবনের সামনে, টিএসসি, নীলক্ষেত মোড়, এলিফ্যান্ট রোড, বাটা সিগন্যাল, ফার্মগেট বাসস্ট্যান্ড ও কাওরান বাজারে পানি বিতরণ করা হয়। ডিএমপি’র পরিবহন এবং ওয়ার্কশপ থেকে দুইজন করে চারজন আলাদা পিকআপ নিয়ে সঙ্গে থাকবেন। পথচারীদের স্বস্তিতে পানি পান করানোর জন্য তাঁরা ছাতা নিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে সহায়তা করছেন।

এর মধ্যে কয়েকদিন আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের জন্য ছাতা, পানি এবং স্যালাইনসহ বিভিন্ন সামগ্রী দেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। তাপপ্রবাহ মাথায় নিয়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সড়কে দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাঁদেরও শারীরিক নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে।

রাজধানীর কাওরানবাজার সার্ক ফোয়ারা মোড়ের পাশে হোটেল সোনারগাঁওয়ের সামনে একটি বিশুদ্ধ পানির একটি ট্যাঙ্ক রাখা আছে। কিছু সময় দাঁড়িয়ে দেখলাম, পুলিশের কী ভূমিকা। একজন পথচারী পানি পান করতে এলেন। একজন পুলিশ সদস্য পানির ট্যাঙ্কের ট্যাপের পাশে ঝোলানো মগ হাতে নিলেন। ট্যাপ থেকে পানি ভরে এগিয়ে দিলেন তৃষ্ণার্ত ওই পথচারীর দিকে। পথচারী পানি পান করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। এই দৃশ্য গোটা রাজধানীতে। ধানমন্ডি, তেজগাঁও, মিরপুর, উত্তরখান, ডেমরা, নিউমার্কেট, শাহবাগ, পল্টন এবং মতিঝিলসহ বেশ কয়েকটি এলাকার প্রধান সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ডিএমপি কমিশনার পথচারীদের জন্য সুপেয় পানির বন্দোবস্ত করেছেন।

বিষয়টি জানতে ফোন দিয়েছিলাম উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি আবুল হাসানের কাছে। তিনি বলেন, প্রচণ্ড দাবদাহে যখন জনজীবন বিপর্যস্ত, তখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মানবিক পুলিশ কমিশনারের নির্দেশক্রমে উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অসহায় ও শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়। তাপপ্রবাহ যতোদিন চলবে, আমরাও আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।

প্রচণ্ড দাবদাহে সবাই একটু শান্তির পরশ খুঁজতে বাসায় অবস্থান করছেন। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া দিনের বেলায় বাসা থেকে অনেকেই বের হচ্ছেন না। সড়কগুলো অনেকটা ফাঁকা। তেমন যানজট নেই। মানবিক পুলিশ কিন্তু সড়কে দাঁড়িয়ে আছেন আপনাকে এক গ্লাস পানি দিতে। জয় হোক মানবিক পুলিশের।

লেখক : সাংবাদিক