চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ ও ডন; চট্টগ্রাম : একটানা চারদিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় পানিবন্দি নগরবাসীর পাশাপাশি চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব উপজেলায় ফসলের ক্ষেত ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। এর পাশাপাশি বীজতলা ও নতুন রোপন করা ধানের চারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে, চট্টগ্রামের বান্দরবানে ৩০ বছরের বৃষ্টির রেকর্ড হয়েছে।
চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর মধ্যে দক্ষিণের সাতকানিয়া, বাঁশখালী, পটিয়া ও আনোয়ারা এবং উত্তরের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকার পরিমাণ বেশি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছাইফুল্লাহ মজুমদার বাঙলার কাগজ ও ডনকে জানান, বেশিরভাগ উপজেলায় পানি বাড়ছে। এর মধ্যে ১০ উপজেলায় পানির পরিমাণ বেশি। দক্ষিণের উপজেলাগুলোতে পানি বাড়ছে মূলত পাহাড়ি সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বাড়ার কারণে। বাড়ছে হালদা ও কর্ণফুলীর পানিও।
উপজেলা ও নগরী মিলিয়ে সোমবার (৭ আগস্ট) রাত পর্যন্ত ৭৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, মোট প্রায় তিন লাখ ১০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে নগরীর পরিবারের সংখ্যা খুবই কম। বেশিরভাগই উপজেলাবাসী।
রাউজান উপজেলার উরকিরচর, পশ্চিম গুজরা, নোয়াপাড়া, বাগোয়ান, পূর্বগুজরা, বিনাজুরী ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের ওপর দিয়ে তীব্রভাবে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কোনও কোনও রাস্তা হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। হালদা ও কর্ণফুলীর পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
বোয়ালখালীর উপজেলার সারোয়াতলী, শাকপুরা, আমুচিয়া, পোপাদিয়ার বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এ উপজেলায় পানিতে কালুরঘাট ফেরির অ্যাপ্রোচ সড়ক, পল্টুন ও বেইলি সেতু ডুবে যাওয়ায় পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।
চন্দনাইশ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা জিমরান সায়েক বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, আমরা ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছি। তিন ইউনিয়নের পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে অনেকে বসবাস করছেন। তাঁদের সরে যাবার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। যাঁরা সরে যাচ্ছেন না, তাঁদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে সাতকানিয়া উপজেলার চরতী ও আমিলাইষ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং ফসলের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাঞ্চনা, এঁওচিয়া, বাজালিয়া ইউনিয়নে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী শতাধিক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হলেও সড়ক যোগাযোগ ঠিক আছে। পাহাড় থেকে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বাররা মিলে অনেক পরিবারকে সরিয়ে নিয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গণি ওসমানী বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, লোকালয়ে এখনও পানি আসে নি। তবে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। বেশি শঙ্কায় আছি পাহাড়ি ঢল নিয়ে। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে অনেককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
‘এ ছাড়া বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ও সাধনপুর ইউনিয়নের সাগরসংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সেখানে বিস্তীর্ণ এলাকায় ও পাহাড়ে ফসল ও সবজিক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইদুজ্জামান চৌধুরী বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, তিনটি ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। এ ছাড়া সাধনপুরে দেয়াল ধসে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সম্রাট খীসা বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, জোয়ারের পানিতে ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সাগরে, নদীতে জোয়ার বেশি হওয়ায় অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু নদী ফুলেফেঁপে বান্দরবান শহর প্লাবিত হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় পাহাড় ধসের কারণে জেলা থেকে উপজেলা ও দূরপাল্লার সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় বান্দরবান কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলা শহরের অনেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে হোটেল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। জেলা শহরে রোববার (৬ আগস্ট) থেকে কোনও বিদ্যুৎ নেই। ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় যোগাযোগেও সমস্যা হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সোমবার (৭ আগস্ট) ভোর ৬টা পর্যন্ত ৩২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। যা গত ৩০ বছরে রেকর্ড। রোববার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, মানুষের জানমাল রক্ষার্থে চট্টগ্রাম মহানগরে ছয়টি সার্কেলের মাধ্যমে ভাগ করে পাহাড় রক্ষা এবং মানুষের জানমাল রক্ষায় জেলা প্রশাসনের কয়েকটি টিম কাজ করছে। এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিদিন মাইকিং থেকে শুরু করে মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে সরে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ভূমিধস রক্ষা এবং বন্যা মোকাবিলায় ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম এবং বান্দরবানে সেনাবাহিনীকে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। তাঁরা এরইমধ্যে কাজও শুরু করেছে।