দুই সিটিতেই ‘তেল চুরির বিনিময়ে’ গাড়ি চালান পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। দেওয়া হচ্ছে না বৈধ নিয়োগ।

দুই সিটিতেই ‘তেল চুরির বিনিময়ে’ গাড়ি চালান পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। দেওয়া হচ্ছে না বৈধ নিয়োগ।

ডন প্রতিবেদন : ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ- এই দুই সিটি করপোরেশনেই তেল চুরি করে গাড়ি চালান পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। এক্ষেত্রে বৈধ চালকের সংখ্যা নেহায়েত কম। তাই অবৈধ চালক হিসেবে অধিকাংশক্ষেত্রেই পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হাতেই থাকছে দুই সিটির গাড়ির চাবি। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনাও। সূত্র জানায়, যে ময়লার গাড়ির চাপায় নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহত হয়েছেন, সেটি ভারী যান। সংস্থাটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যবহারের জন্য এমন ৩১৭টি ভারী যান রয়েছেন। কিন্তু চালক রয়েছেন মাত্র ৮৬ জন। বাকি গাড়িগুলো পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাই চালান। যাঁদের অধিকাংশেরই লাইসেন্স নেই। ফলে সংস্থার গাড়িগুলো মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস বাংলা কাগজ এবং ডনকে বলেন, ঘটনাটির জন্য আমরা খুবই মর্মাহত। তিন বছর ধরে সে (হারুন) ওই গাড়িটি চালায়। এখন বিষয়টি তদন্ত করে বিস্তারিত বলতে পারবো। তবে পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে ময়লাবাহী গাড়ি চালানোর বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। এদিকে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর আগেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় একাধিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন পথচারী। এ বছরের মার্চে ডিএসসিসির একই ধরনের গাড়িচাপায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) টেলিফোন অপারেটর মোহাম্মদ খালিদ প্রাণ হারান। পরের মাসে যাত্রাবাড়ীর বিবির বাগিচা এলাকায় মোহাম্মদ মোস্তফা (৪০) নামে একজন রিকশাচালক নিহত হন। আহত হন ওই রিকশার যাত্রী। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা ময়লার গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া ২০১৮ সালে জুরাইনে আরেক পথচারী নিহত হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির নিয়োগপ্রাপ্ত দুজন চালক বাংলা কাগজ এবং ডনকে বলেন, আগের তিনটি দুর্ঘটনায় জড়িত চালকেরাও পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন। তাঁরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতেন। বারবার দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রতিকারে ব্যবস্থা নেয় নি কর্তৃপক্ষ। কারও বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয় নি। বরং এ অদক্ষ চালকদের অর্থের বিনিময়ে কোটি টাকা দামের গাড়ি চালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, চালক সঙ্কটের কারণেই অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ করা কর্মীদের দিয়ে সরকারি গাড়ি চালানো হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেও চালকের সঙ্কট রয়েছে। এখানে ক্লিনার-পিয়নদের দিয়েও গাড়ি চালানো হয়। রয়েছে বহিরাগত চালকও। বৈধ চালকরা তাঁদের গাড়ির চাবি অন্যদের দিয়ে দেন। তাঁরা তেল চুরি করে নিজের পরিবার চালান। এরসঙ্গে করপোরেশনের পরিবহন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারাও জড়িত। আবার বৈধ চালক নিয়োগে কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে কোনও তদারকিও নেই। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের উল্টোদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় প্রাণ হারান গণমাধ্যমকর্মী আহসান কবির খান। সার্বিক বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বাংলা কাগজ এবং ডনকে বলেন, ‘ঘাতক চালকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলামের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ ‘এ ছাড়া নিহতের পরিবারের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা করা হবে।’ ‘আর বৈধ চালকদের বিষয়টি শিগগিরই দেখা হবে।’ এদিকে আজকের ঘটনার আগে গতকাল বুধবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান মারা যান। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত চালককে আটক করা হয়েছে। আর শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এবং এ ঘটনায় করা হয়েছে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি।