নারী উদ্যোক্তা : বড় ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে রুবিনার যাত্রা।

নারী উদ্যোক্তা : বড় ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে রুবিনার যাত্রা।

ডন প্রতিবেদন : রুবিনা আক্তার জীবনের লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন তিনি ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করবেন। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজের তৈরি পণ্য রপ্তানির স্বপ্ন দেখতেন। সেজন্য তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স শেষ করে ভারতের বেঙ্গালুরুতে চলে যান ফ্যাশন ডিজাইনে ডিপ্লোমা করতে। সেই ডিপ্লোমাই পরবর্তী সময়ে বেশ কাজে লেগেছে। এরইমধ্যে তিনি নিজস্ব ব্র্যান্ড দাঁড় করিয়েছেন, যেটির নাম ডিজাইন বাই রুবিনা। এই ব্র্যান্ডের নামে পাট ও চামড়ার ব্যাগ-জুতা-জ্যাকেট ইত্যাদি বানিয়ে দেশে-বিদেশে বিক্রি করেন। ডিজাইন বাই রুবিনার মূল কারখানা টঙ্গীতে, আর অফিস হচ্ছে ঢাকার ফার্মগেটে। তাঁরসঙ্গে কথা হয় বাঙলা কাগজ এবং আওয়ার ডনের। রুবিনা আক্তার জানান, নিজেরাই পণ্যের ডিজাইন করেন। ভালো লাভ হয়। পাটপণ্য তৈরির মধ্য দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও এখন চামড়ার পণ্যেই বেশি ব্যবসা হয়। রুবিনা বলেন, ‘ভারতে পড়াশোনা শেষ করে ২০০৮ সালে যখন দেশে ফিরে আসি, তখন আমার কাছে কোনো টাকা ছিল না। ব্যবসার পুঁজি জোগাড় করার জন্য প্রথমে একটি প্রতিষ্ঠানে ডিজাইনার হিসেবে চাকরি নিই। সে প্রতিষ্ঠান আমাকে মাসে ৩৫ হাজার টাকা বেতন দিত। দুই বছর পর্যন্ত আমি সেই বেতন থেকে টাকা জমাতাম, যাতে নিজে কিছু শুরু করতে পারি।’ ২০১০ সালে রুবিনার জমানো টাকার পরিমাণ ৮০ হাজার দাঁড়ালে সেটাকে পুঁজি করে তিনি ব্যবসায় নামেন। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন ডিজাইন বাই রুবিনা। তখন শুধু তৈরি করতেন পাটজাত পণ্য। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিমুহূর্তে চেষ্টা করতাম নিজেকে উন্নত করতে। এ কারণে ব্যবসার পাশাপাশি এমবিএ করলাম, যা ব্যবসার হিসাব বুঝতে খুব সহায়ক হয়েছে।’ একপর্যায়ে রুবিনা বুঝতে পারেন যে পাটপণ্যের চেয়ে চামড়াপণ্য বেশি দেশে রপ্তানি করা যায়। সে জন্য ২০১৫ সালে তিনি চামড়াপণ্য তৈরিতে বিনিয়োগ শুরু করেন। মূলত পাটপণ্য থেকে যে আয় হতো, সেটিই বিনিয়োগ করতেন চামড়াপণ্য তৈরির জন্য। এ ক্ষেত্রে সুবিধা ছিল, প্রায় একই কৌশলে পাট ও চামড়া দুই ধরনের পণ্যই তৈরি করা যায়। রুবিনা আক্তার বলেন, ‘আমি যখন ব্যবসায় নামি, তখন খুব কম উদ্যোক্তাই নিজস্ব ডিজাইনে পণ্য তৈরি করতেন। যাঁরা এই ব্যবসায় ছিলেন, তাঁরা শুধু ফরমাশ অনুযায়ী কাজ করে দিতেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমি দ্রুতই বাজার ধরে ফেললাম। প্রথম দিকে যা লাভ থাকত, তা আবার ব্যবসাতেই বিনিয়োগ করতাম। ফলে ব্যবসা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকল।’ মাসিক বিক্রি বেড়ে ইতিমধ্যে ১০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানান রুবিনা। বলেন, এখন টঙ্গীতে প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুটের একটি কারখানা আছে। সেখানে কাজ করেন ৩৫ জন কর্মী। রুবিনা জানান, এখন পর্যন্ত তিনি পাট ও চামড়ার পণ্য দুবাই, কাতার, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড ও কাতারে রপ্তানি করেছেন। বেশ গর্বের সঙ্গেই তিনি বলেন, ‘কাতারের আল-জাজিরা টিভি কিছু ট্রাভেল ব্যাগ নিয়েছে আমাদের কাছ থেকে। দুবাইয়ের শপিং মলগুলোর সঙ্গেও এখন কিছু কাজ চলছে। করোনার আগে ৭০ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করেছি। এখন আবার নতুন কিছু রপ্তানি আদেশ পেয়েছি।’ ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা সম্পর্কে রুবিনা আক্তার জানান, নিজের নামে ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এখন তিনি কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন। বড় ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন, যাতে বিশ্বের সব দেশের বড় শপিং মলগুলোতে শোভা পায় তাঁর ডিজাইনে তৈরি বিভিন্ন পণ্য।