প্রধানমন্ত্রী : সিনেমা নির্মাণে সরকারি অনুদান বাড়ানো হবে

প্রধানমন্ত্রী : সিনেমা নির্মাণে সরকারি অনুদান বাড়ানো হবে

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : সিনেমা নির্মাণে সরকারি অনুদান বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে অর্থনৈতিক যে মন্দা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতি দারুণভাবে বেড়ে গেছে। সেখানে এই মুহূর্তে সরকার যে অনুদান দিচ্ছে, এটা একটা পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য যথেষ্ট না। এই অনুদান আরও বাড়াতে হবে। আমি আগামী বাজেটে উদ্যোগ নেবো।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাস্তবতা হলো ২৫ লাখ টাকা একটা সিনেমার জন্য যথেষ্ট নয়। বর্তমানে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার জন্য ২৫ লাখ, স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার জন্য ২০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এটা অনেক কম। এটা হয় না। একটা ভালো বাজেট হলে একটা ভালো সিনেমা নির্মাণ করা সম্ভব বলে আমি করি।’

তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেখেছি সবার মাঝে আলাদা একটা মেধা ও চিন্তাশক্তি আছে। একটা আর্টিস্টিক ও শৈল্পিক মেধা আছে। তাঁদের মাধ্যমে জীবনধর্মী যেসব সিনেমা তৈরি হয়, সেগুলো মানুষকে আকর্ষিত করে। একটা সিনেমা একজন মানুষের জীবনকে পাল্টে দিতে পারে, একটা সমাজকে পাল্টে দিতে পারে। এ ধরনের সিনেমা তৈরিতে মনোযোগ দিতে হবে। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও চলচ্চিত্র জগতের সবাই অনেক পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, এজন্য সবাইকে সাধুবাদ জানাই।’

২০২১ সালের নির্বাচিত সিনেমা থেকে এ বছর ২৭টি ক্যাটাগরিতে ৩৪টি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। 

এ ছাড়া চলচ্চিত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় যৌথভাবে এবার আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেত্রী ডলি জহুর ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন।

গত বছরের ১৬ আগস্ট তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ১৩ সদস্যের জুরি বোর্ড গঠন করে। ২০২১ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত ২১টি পূর্ণদের্ঘ্য, ১৭টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও ৭টি প্রামাণ্য চলচ্চিত্রসহ মোট ৪৫টি চলচ্চিত্র জমা পড়েছিলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য।

এবার পুরস্কার পেলেন যাঁরা :
যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হয়েছে মাতিয়া বানু শুকু (লাল মোরগের ঝুঁটি) ও রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য)। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা যৌথভাবে সিয়াম আহমেদ (মৃধা বনাম মৃধা) ও মীর সাব্বির মাহমুদ (রাতজাগা ফুল), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী যৌথভাবে আজমেরী হক বাঁধন (রেহানা মরিয়ম নূর) ও তাসনোভা তামান্না (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবু (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রে শম্পা রেজা (পদ্মপুরাণ), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা খল চরিত্রে আবদুল মান্নান জয়রাজ (লাল মোরগের ঝুঁটি)। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কৌতুক চরিত্রে প্রভাষ কুমার ভট্টাচার্য্য মিলন (মৃধা বনাম মৃধা), শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী আফিয়া তাবাসসুম (রেহানা মরিয়ম নূর), শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিক (যা হারিয়ে যায়)।

শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম (যৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ গায়ক কে এম আবদুল্লাহ-আল-মুর্তজা মুহিন (শোনাতে এসেছি আজ- পদ্মপুরাণ), শ্রেষ্ঠ গায়িকা চন্দনা মজুমদার (দেখলে ছবি পাগল হবি- পদ্মপুরাণ), শ্রেষ্ঠ গীতিকার প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ার (অন্তরে অন্তর জ্বালা- যৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ সুরকার সুজেয় শ্যাম (অন্তরে অন্তর জ্বালা- যৈবতী কন্যার মন)।

শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার নূরুল আলম আতিক (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা তৌকীর আহমেদ (স্ফূলিঙ্গ)।

শ্রেষ্ঠ সম্পাদক সামির আহমেদ (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক শিহাব নূরুন নবী (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক দলগত- সৈয়দ কাশেফ শাহবাজি, সুমন কুমার সরকার, মাজহারুল ইসলাম রাজু (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক শৈব তালুকদার (রেহানা মরিয়ম নূর), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা ইদিলা কাছরিন ফরিদ (নোনাজলের কাব্য)। 

শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান দলগত- মো. ফারুখ ও মো. ফরহাদ রেজা মিলন (লাল মোরগের ঝুঁটি)।

শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আকা রেজা গালিব (ধর), শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র কাওসার চৌধুরী (বধ্যভূমিতে একদিন)।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্‌মুদের সভাপতিত্বে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। 

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় করেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ ও নায়িকা নুসরাত ফারিয়া।