অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পুরস্কার দিলো টিআইবি
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বাঁক বদল ঘটছে ডেটা (উপাত্ত) সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের আইনি কাঠামো ডেটা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ডেটা উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকে। রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে মূল্যস্ফীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও আটকে দেওয়া হচ্ছে। সরকার নীতি প্রণয়ন করলেও ডেটার প্রকাশ, সহজপ্রাপ্যতা ও ব্যবহার বাড়াতে পারে নি।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কার্যালয়ে ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে ডেটা সাংবাদিকতা : পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আলোচকেরা এসব মতামত তুলে ধরেন। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে টিআইবি। একইসঙ্গে ২০২২ সালে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার স্বীকৃতি হিসেবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
বাক্স্বাধীনতা ও তথ্য প্রকাশ নিয়ে একটা ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন, তবে তা শুধু কাগজ-কলমে থাকলে হবে না। যারা দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত, তাদের বিচার ও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্বে, তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে।
সভায় ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে ডেটা সাংবাদিকতা : পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সমন্বয়ক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তাতে বলা হয়, ক্ষমতাশালীদের অবৈধ সম্পদ অর্জন, কর ফাঁকি ও পাচার, জটিল নেটওয়ার্ক উন্মোচনে ডেটা সাংবাদিকতা নতুন পথ দেখিয়েছে। দেশের বেশিরভাগ সাংবাদিকেরই ডেটা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সক্ষমতা গড়ে ওঠে নি।
প্রবন্ধে বলা হয়, ডেটা উন্মুক্ত করতে সরকার কতটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, কি ধরনের আইনি কাঠামো ও পরিবেশ ব্যবহার করছে, তা পরিমাপে গ্লোবাল ডেটা ব্যারোমিটারের সূচক জনপ্রিয়।
চলতি বছরের ডেটা ব্যারোমিটার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ১০০ নম্বরের মধ্যে ২৩ দশমিক ৮ পেয়েছে, যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গড় স্কোর ৩২ দশমিক ৭৯ থেকে বেশ কম। প্রাপ্যতা, সক্ষমতা, ব্যবহার ও ফলাফল, উন্মুক্ত ডেটা নীতি এসব মানদণ্ড ব্যবহার করে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।
তবে বাংলাদেশে ডেটা সাংবাদিকতার ভালো সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের (জিআইজিএন) রোভিং এশিয়া এডিটর মিরাজ আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, জবাবদিহি নিশ্চিতে ডেটা সাংবাদিকতা নতুন মাত্রা যোগ করবে। দুর্নীতি এখন বৈশ্বিক রূপ নিয়েছে, দেশের সাংবাদিকদের সেই অনুযায়ী সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় সরকার ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে। ডেটা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নতুন মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে এ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা। ব্রিটিশ আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট এবং নতুন হতে যাওয়া ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্টও ডেটা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাধা।
বৈশাখী টেলিভিশনের প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট জুলফিকার আলী বলেন, কী করলে বিপদে পরে যাই, সাংবাদিকদের মধ্যে এমন মানসিকতা দেখা যাচ্ছে। সাহস নিয়ে সাংবাদিকতা করতে হলে পেশাগত জীবনে সৎ থাকার বিকল্প নেই।
সভায় আরও বক্তব্য দেন টিআইবির এক্সিকিউটিভ ম্যানেজমেন্টের পরামর্শক সুমাইয়া খায়ের, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন ও ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম হেল্প ডেস্কের প্রধান বদরুদ্দোজা বাবু। সভায় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির পরিচালক শেখ মঞ্জুর-ই-আলম।
২০২২ সালের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন : প্রিন্ট বিভাগে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আসাদুজ্জামান। তিনি ‘সাইবার অপরাধ-১: ৯৭ ভাগ মামলাই টেকেনি’, ‘সাইবার অপরাধ-২: মামলা সবচেয়ে বেশি ঢাকায়, পরে চট্টগ্রাম’ ‘সাইবার অপরাধ-৩: পরিকল্পিত সাইবার অপরাধ তুলনামূলক কম।’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য এ পুরস্কার পান।
আঞ্চলিক পর্যায়ে টিআইবির এ পুরস্কার পান খুলনার দৈনিক পূর্বাঞ্চলের নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল হাসান এবং টেলিভিশন মিডিয়াতে যমুনা টেলিভিশনের ইনভেস্টিগেশন দলের এডিটর অপূর্ব আলাউদ্দিন। প্রামাণ্য অনুষ্ঠান বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে চ্যানেল ২৪-এর সার্চলাইট।