প্রপার সাউন্ড, প্রপার ইমেজ ও প্রপার পরিবেশ হলেই আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে যাবে : মোস্তাফিজুর রহমান মানিক

প্রপার সাউন্ড, প্রপার ইমেজ ও প্রপার পরিবেশ হলেই আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে যাবে : মোস্তাফিজুর রহমান মানিক

একজন প্রতিভাবান পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। পরিচালনায় আসা এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন বাঙলার কাগজ’র সম্পাদক ও প্রকাশক কালাম আঝাদ।

প্রশ্ন : ১. আপনার ছবি নির্মাণে আসার পেছনে কার অনুপ্রেরণা সবচেয়ে বেশি ছিলো এবং কেনো?
উত্তর : ছবি নির্মাণের পেছনে আসলে স্পেসেফিক কারও অনুপ্রেরণা বলা ঠিক হবে না, আমি আসলে অনেক ছবি দেখতাম ১৯৯৭-১৯৯৮ সালের দিকে। প্রচুর ছবি দেখতাম। আর ছবি দেখে আমি উৎসাহ পেতাম। আমি ক্লাসিক্যাল ছবি দেখতাম। আমি বাণিজ্যিক ছবি দেখতাম। এসব ছবি দেখার পর আমার হঠাৎ মনে হলো : আমিও ছবির পার্ট হতে পারি। সেটা কীভাবে, সেটা- তখন চিন্তা করলাম ফিল্ম ডিরেক্টর হওয়া যায়। ফিল্ম ডিরেক্টর হয়ে ছবি নির্মাণ করলে আমি ছবির পার্ট হতে পারবো। আর এরপর বলতে পারেন, আমার ওস্তাদ জাকির হোসেন রাজু স্যারের সঙ্গে যখন কাজ করেছি, তখন আমার ছবির নির্মাণের স্পৃহাটা আরও বেড়ে গেছে। শেষ হচ্ছে আমি সুপারস্টার শাবনূরের ভক্ত ছিলাম, তখন আমি ভাবলাম, তাঁকে নিয়ে একটা ছবি নির্মাণ করা যায়। আসলে এর সবই আমার ছবি নির্মাণের অনুপ্রেরণা।  

প্রশ্ন : ২. আপনার নির্মাণ করা ছবির মধ্যে কোন ছবিটা আপনার কাছে সেরা বলে মনে হয় এবং কেনো?
উত্তর : আসলে আমি যেসব ছবি নির্মাণ করেছি এখন পর্যন্ত, সবগুলোই তো আমার কাছে প্রিয়, আমার সন্তানের মতো। সবগুলোকেই আমি চেষ্টা করেছি ভালোভাবে করার জন্য। হয়তো কোনোটা ভালো হয়েছে, কোনোটা হয় নি, সেটা জনগণের কাছে। কিন্তু আমার কাছে তো সবগুলোই প্রিয়। তার মধ্যেও যদি স্পেসেফিক্যালি জানতে চান, এর মধ্যে আমার ২টা ছবি সবচেয়ে বেশি প্রিয়। এর একটা হলো ‘দুই নয়নের আলো’ আমার প্রথম ছবি, সেই ছবি ৩টি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়। এরপরে ‘জান্নাত’ এটিও আমার কাছে খুব প্রিয়। এর বিষয়বস্তু খুব শক্তিশালী। এই ছবিতে আমি নিজে শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি এবং আরও ৫টি ক্যাটাগরিতে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় জান্নাত। এই দুটি ছবির কথাই স্পেসিফিক্যালি বলা যায়।

প্রশ্ন : ৩. বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের সুসময় ফিরে এসেছে বলেই বোদ্ধারা বলছেন। এই মুহূর্তে দর্শককে হলে টানতে আপনি কী উদ্যোগ নিতে চাইছেন?
উত্তর : হ্যাঁ, গত কয়েকটা ঈদেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, ছবির সুদিন ফিরে এসেছে। কারণ ঈদের ছবিগুলো ভালো যায়, খুব ফেস্টিভ মুড থাকে। বিশেষ করে এবারের ঈদে খুব ভালো ভালো ছবি রিলিজ হয়েছে। ‘প্রিয়তমা’ তো অলটাইম ব্লকবাস্টার হয়ে গেছে; ‘সুড়ঙ্গ’ সুপারহিট। ভালো ছবি এসেছে, দর্শক সেটা লুফে নিয়েছে। আমাদের যেটা করতে হবে, সারা বছর ধরে এই ফেস্টিভ মুডটা অব্যাহত রাখতে হবে। সারা বছর ধরে ভালো ছবি নির্মাণ করতে হবে। আমি যেটা করবো ব্যক্তিগতভাবে, কনটেন্টের প্রতি বেশি মনোযোগী হবো, বিষয় নির্বাচনে আরও মনোযোগী হবো এবং কাস্টিংয়ে আরও মনোযোগী হতে হবে। এবং এগুলোর সবই সম্ভব একজন ভালো প্রডিউসার পেলে। তো আমি একজন ভালো প্রডিউসার পাওয়ার অপেক্ষায় আছি, যাতে প্রিয়তমা বা সুড়ঙ্গ এই মাপের ছবি উপহার দেওয়া যায়।

প্রশ্ন : ৪. বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কবে নাগাদ অস্কার পেতে পারে বলে আপনার মনে হয় এবং অস্কারের জন্য কোন ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ করা উচিত?
উত্তর : হ্যাঁ, এটাতো আসলে এভাবে বলা যায় না, বাংলাদেশের ছবি কবে অস্কার জিতবে। তবে অস্কার না জিতলেও কানে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ভালো করেছে। এর আগে আমাদের ‘মাটির ময়না’ ভালো করেছিলো। তো এখন যেহেতু খুব ট্যালেন্টেড ফিল্ম মেকাররা ছবি নির্মাণ করতে আসছেন, তাঁরা খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ ছবি নিয়ে ছবি নির্মাণ করছে, নির্মাতাদের নির্মাণের ঢংও আলাদা; অস্কার তো হবে কি হবে না সেটা সময় বলে দেবে; কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের কনটেন্টের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, তৈরি হবে, তৈরি হচ্ছে, আমি খুবই আশাবাদী।

প্রশ্ন : ৫. বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে আপনার পরামর্শ দিন।
উত্তর : বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে হলে- মেকিংটায় আমরা এগিয়েছি ভালো, কারণ আমি আগেই বলেছি, এখানে খুব মেধাবী চিত্র পরিচালকরা আসছেন, ছবি বানাচ্ছেন এবং টেকনিক্যালিও রিচ হচ্ছে আমাদের ছবি। আমি মনে করি, প্রত্যেকটা ফিল্ম মেকারকে অবশ্যই একটা টেকনিক্যালি রিচ টিম নিয়ে কাজ করতে হবে। এবং সর্বশেষ যে মার্কেটিং ব্যবস্থা- বিপণন ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। আমাদের ই-টিকেটিং যতোদ্রুত সম্ভব করতে হবে। যাতে আমরা প্রপার বক্স অফিস ডাটাগুলো পেয়ে যাই আর আমাদের সাউন্ড সিস্টেম এবং আমাদের প্রজেকশন, যেখানে মফস্বলে হলগুলো আছে, আমাদের হলের পরিবেশ এগুলো যতোদ্রুত সম্ভব আধুনিক করতে হবে। প্রপার সাউন্ড, প্রপার ইমেজ এবং তার সঙ্গে একটা প্রপার পরিবেশ হয়ে গেলেই আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে যাবে।