বিএনপির আমলে পুলিশের ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার ট্র্যাজেডি দিবস আজ।
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট মাকে দেখার জন্য দীর্ঘদিন পর ঢাকা থেকে দিনাজপুরে বাড়ি ফিরছিলেন কিশোরী ইয়াসমিন। রাতে কাহারোল উপজেলার দশমাইল মোড়ে বাস থেকে নামেন কিশোরী ইয়াসমীন। সেখানে একটি চায়ের দোকান থেকে কতিপয় বিপথগামী পুলিশ তাঁদের ভ্যানে করে জোরপূর্বক নিয়ে যায় কিশোরী ইয়াসমিনকে। তাঁরা ভ্যানের ভেতরেই ইয়াসমিনকে ধর্ষণ করে হত্যা করেন।
পরে তাঁর মরদেহ দিনাজপুর শহরে ঢোকার আগে রানীগঞ্জ মোড়ের ব্র্যাক অফিসের সামনে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায়। লাশ পাওয়ার পরের দিন প্রথমে দশমাইল এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। পরে তা ধীরে ধীরে আন্দোলনে রূপ নেয়। আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে দমাতে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে নিহত হন ৭ জন। গুলিবিদ্ধ হন আরও অনেকে।
আন্দোলনের মুখে ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় করা তিন মামলা আদালতে ১২৩ দিন বিচার কাজ শেষে ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত আব্দুল মতিন রায় ঘোষণা করেন। উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মঈনুল, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার ও পুলিশের পিকআপ ভ্যানচালক অমৃত লাল বর্মনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ বিধান ’৯৫-এর ৬(৪) ধারায় ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর আদেশ দেন।
এ ছাড়া আলামত নষ্ট, সত্য গোপন ও অসহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মঈনুলকে আরও পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
তবে পুলিশের ফাঁসি হলেও সে সময় যাঁরা ইয়াসমিনকে ধর্ষণ ও হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে গুলি খেয়ে মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন তাঁরা এখনো বিচার পান নি।
সে সময় বিরোধী দলে থাকা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইয়াসমিন আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছিলেন। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে একটি আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করা সময়ের দাবি বলেই জানালেন ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল।
ইয়াসমিনের স্মরণে দিনাজপুরের দশ মাইল এলাকায় জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির পরিকল্পনায় তৈরি করা হয়েছে ইয়াসমিন স্মরণী। পাশে তৈরি হয়েছে, ইয়াসমিন যাত্রী ছাউনি ও পাঠাগার। এ ঘটনায় সম্মিলিত নারী সমাজের পক্ষ থেকে ২৪ আগস্ট ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
ফলে আজকের দিনটিকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন।