বাজেটে যেসব পণ্যের দাম কমছে ও বাড়ছে
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : প্রতিবারই বাজেট ঘোষণার পর দেখা যায়, বেশকিছু পণ্যের দামের পরিবর্তন ঘটে। কিছু পণ্যে শুল্ক ও কর প্রত্যাহার করে সরকার, ফলে সাধারণত সেসব পণ্যের দাম কমতে দেখা যায়। আবার কিছু পণ্যে সরকার নতুন করে কর আরোপ করে, ফলে সেসব পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট ঘিরেও সাধারণ মানুষের আগ্রহ হচ্ছে - কোন জিনিসের দাম কমতে বা বাড়তে পারে।
দাম কমছে যেসব পণ্যের :
কৃষিজ যন্ত্রপাতি :
কৃষি কাজে ব্যবহৃত রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, ড্রায়ার, পটেটো প্লান্টার ও সব রকম স্প্রেয়ার মেশিনে আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী।
ফলে এসব যন্ত্রপাতির দাম কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। একইসঙ্গে সার, বীজ, কীটনাশক আমদানিতে শুল্কহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
মিষ্টান্ন :
কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে মিষ্টান্ন সেবার মূসক হার অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে সরকার। এ খাতে ১৫শতাংশ ভ্যাট বরাদ্দ থাকলেও নতুন অর্থবছরে এটি ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিভিন্ন ওষুধ :
ম্যালেরিয়া ও যক্ষা নিরোধক ওষুধ এর উৎপাদন পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের ১ শটি কাঁচামাল ও ডায়াবেটিক ওষুধের ৩টি কাঁচামাল করছাড়ের আওতায় আনা হয়েছে।
হাতে তৈরি বিস্কুট ও কেক :
হাতে তৈরি বিস্কুট ও কেকের ক্ষেত্রে কর অব্যাহতির সীমা বাড়ানো হয়েছে। ফলে এ দুটি পণ্যের দাম কমার আশা করা হচ্ছে।
অন্যান্য পণ্য :
এ ছাড়া বাজেটে বিমানের ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ, পশুখাদ্যের কাঁচামাল, অপটিক্যাল ফাইবার ও আমদানিকৃত কন্টেইনারে করছাড়ের প্রস্তাব করায় এসব পণ্যের দাম কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আর আগেই থেকেই করছাড়ের সুবিধা পেয়ে আসা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, স্যানিটারি ন্যাপকিন, ডায়াপার, ওয়াশিং মেশিন, ইত্যাদি পণ্যের শুল্ককর অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
দাম বাড়ছে যেসব পণ্যের :
সিগারেট :
প্রতিবছরই বাজেট ঘোষণার পর সবচেয়ে আলোচনা হয় সিগারেটের দাম বৃদ্ধি ঘিরে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
যথারীতি বাজেট ঘোষণার কয়েক সপ্তাহ আগেই দাম বেড়ে যায় সিগারেটের। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তৃতায় তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কমানো এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেশকিছু প্রস্তাব রাখেন।
সেক্ষেত্রে সিগারেটকে চারটি ভাগে ভাগ করে নিম্নস্তরের সিগারেটের প্যাকেটের সর্বনিম্ন মূল্য ৪৫ টাকা ও সম্পূরক শূল্ক ৫৮ শতাংশ ধার্যের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া মধ্যম স্তর, উচ্চ স্তর ও অতি-উচ্চ স্তরের সিগারেটের উপর ৬৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে দাম বেড়েছে ইলেকট্রনিক সিগারেটেরও।
তবে বিড়ির দাম গতবছরের ন্যায় অপরিবর্তিত রয়েছে। এছাড়া তামাকজাত পণ্যের মধ্যে জর্দা ও গুলের শুল্ক না বাড়লেও খুচরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সিমেন্ট :
সিমেন্ট উৎপাদনের অন্যতম প্রধান কাঁচামাল সিমেন্ট ক্লিঙ্কার্স, যার শুল্ক প্রতি মেট্রিক টনে ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে।
এ ছাড়া বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য ‘স্পেসিফিক রেট অফ ডিউটি’ প্রতি মেট্রিক টনে ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা করার প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী।
ফলে এখন প্রতি বস্তা সিমেন্টের দামে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন বর্তমানে সিমেন্ট উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই আমদানি শুল্ক যৌক্তিকীকরণ ও রাজস্ব বৃদ্ধির স্বার্থে সিমেন্ট ক্লিঙ্কার্সের এই শুল্কহার বাড়ানো হলো।
মোবাইল ফোন :
নতুন অর্থবছরে মোবাইল ফোনের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বাড়ানো হয়েছে। যা এতদিন শূন্য শতাংশ ছিল সেখানে ২ শতাংশ, এরপর ৩ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ শতাংশ কর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
এক্ষেত্রে সব ধরণের মোবাইল ফোনের দাম বেড়ে যেতে পারে।
এলপিজি সিলিন্ডার :
গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম বাড়তে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেন স্থানীয়ভাবে সিলিন্ডার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে গত ১২ বছর ধরে শুল্ককর ছাড় সুবিধা ভোগ করে আসছে।
কিন্তু রাজস্ব আহরণের স্বার্থে সিলিন্ডার তৈরির দুটি উপাদান স্টিল শিট এবং ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির উপর থেকে করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এর উপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত সরকারের।
প্লাস্টিক পণ্য :
প্লাস্টিকের তৈরি সকল ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রীর মূসক হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী। তবে প্লাস্টিকের টিফিন বক্স ও পানির বোতলের কর অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া বাজেটে নতুন করে শুল্ককর যোগ হওয়ায় কলম, টিস্যু পেপার, বাসমতি চাল, খেজুর, ফেসওয়াশ, অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র ও সেনিটারি সামগ্রীর দাম বাড়তে পারে।