অষ্টমী স্নানোৎসব

অষ্টমী স্নানোৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : লাঙ্গলবন্দে হিন্দু ধর্মালম্বীদের দুই দিনব্যাপী মহা অষ্টমী পুণ্যস্নান উৎসব চলছে। আদি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে স্নানোৎসব সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ২১ মিনিট থেকে শুরু হয়। শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ৫৬ মিনিটে।

ইতোমধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানসহ দেশ-বিদেশ থেকে পুণ্যার্থীরা স্নানোৎসবে এসেছেন। এবার লাঙ্গলবন্দে স্নানোৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পাদন করতে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ। ‘হে মহা ভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য আমার পাপ হরণ কর’-এ মন্ত্র উচ্চারণ করে পাপ মোচনের আশায় ব্রহ্মপুত্র নদে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা স্নানোৎসবে অংশগ্রহণ করছেন। স্নানের লগ্ন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুণ্যার্থীরা ডাব, দুর্বা, বেলপাতা ও ফলমূলসহ বিভিন্ন পূজার সামগ্রী নিয়ে পুণ্যস্নানে আদিকাল থেকেই অংশ করছেন।

দুদিনব্যাপী এ স্নানোৎসবে পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছে পুরো তীর্থস্থানের এলাকাজুড়ে। পাপমোচনের জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পুণ্যার্থীদের পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠেছে লাঙ্গলবন্দ এলাকা। কথিত আছে, ব্রহ্মপুত্রের জলের মাধ্যমে পাপমুক্ত হয়েছিলেন বিষ্ণুর অবতার পরশুরাম মুনি। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, মহাভারতের বর্ণনামতে পরশুরাম মুনি পাপমুক্তির জন্য ব্রহ্মপুত্র নদে যে স্থানের জলে স্নান করেছিলেন, তা লাঙ্গলবন্দে অবস্থিত। সেই থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস এ সময়ে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান খুবই পুণ্যের। এ স্নানের ফলে ব্রহ্মার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে পাপমোচন হয়। এ বিশ্বাস নিয়ে সুদীর্ঘকাল ধরে পরশুরামের পাপ থেকে মুক্তি হওয়ার কথা স্মরণ করে শত শত বছর ধরে লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে অষ্টমী স্নান অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

লাঙ্গলবন্দ মহা অষ্টমী স্নান উদ্‌যাপন কমিটি সরষ কুমার শাহা জানান, এবার ২০টি স্নান ঘাট পুণ্যার্থীদের জন্য সংস্কার করা হয়েছে। বিশুদ্ধ খাবারের জল সরবরাহের জন্য ১৬টি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। বিপুলসংখ্যক কাপড় পরিবর্তন কক্ষ রাখা হয়েছে। ১৫০টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করেছে জেলা প্রশাসন।  

আর ব্রহ্মপূত্র নদের কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, ৫টি মেডিকেল টিম ও নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস ১০ শয্যাবিশিষ্ট অস্থায়ী হাসপাতালের ব্যবস্থা করেছেন। দর্শনার্থীদের সেবা নিশ্চিতে বেসরকারিভাবে ৬০টি সেবা ক্যাম্প ও ৪ শ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। প্রশাসনের পক্ষে পুরো ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১ শটি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

আর নৌপুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ উৎসবকে ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এবারও স্নানোৎসব উপলক্ষে লোকজ মেলা বন্ধ রাখার নির্দেশনা আরোপ করলেও রাস্তার দুপাশেই বসেছে লোকজ মেলা।

পুণ্যার্থীদের স্নান ঘাট গুলো হলো : ললিত সাধুর ঘাট, নাসিম ওসমান কেন্দ্রীয় স্নানঘাট, গৌর বিষ্ণুপ্রিয়া স্নানঘাট, জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি স্নানঘাট, অন্নপূর্ণা স্নানঘাট, লাঙ্গলবন্দ রাজঘাট, মাকরী সাধুর শান্তি আশ্রম স্নানঘাট, গান্ধী ঘাট বা মহাশ্মশান স্নানঘাট, বরদেশ্বরী কালী ও শিব মন্দির স্নানঘাট, জয়কালী মন্দির স্নানঘাট, রক্ষা কালীমন্দির স্নানঘাট, পাষাণ কালীমন্দির স্নানঘাট, স্বামী দ্বিগিজয় ব্রহ্মচারী আশ্রম প্রেমতলা, শ্রী রামপুর জগদ্বন্ধু স্নানঘাট (ব্রহ্মা মন্দির), দক্ষিণেশ্বরী কালী মন্দির স্নানঘাট, পরেশ মাহাত্মা আশ্রম স্নানঘাট, সাব্দী রক্ষা কালীমন্দির স্নানঘাট, সাব্দী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম স্নানঘাট, পঞ্চ পাণ্ডব স্নানঘাট (কালীগঞ্জ ঘাট) ও শ্রী প্রভুপাদ স্নানঘাট।

নারায়ণগঞ্জ  জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, এবারের স্নানোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদ্‌যাপন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানসহ দেশ-বিদেশের অসংখ্য পুণ্যার্থী অংশগ্রহণ করছেন। এবার আশা করা হচ্ছে, ১০ লাখেরও বেশি দর্শনার্থী এ স্নানোৎসবে অংশ নেবেন।

বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ মুহাইমিন আল জিহান বলেন, স্নান উৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। স্নান ঘাটগুলো বাধাই কাজসহ কাপড় বদলানোর কক্ষ ও পর্যাপ্ত অস্থায়ী টয়লেটেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাদা পোশাকে তৎপর রয়েছে। কন্ট্রোল রুম থেকে সকল কিছু মনিটরিং করা হচ্ছে। আমরা আশা করি খুব শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব সম্পন্ন করতে পারবো।’

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে পুলিশ, র‌্যাব ও সাদা পোশাকসহ ১ হাজার ৫ শ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো এলাকাজুড়ে ১ শরও বেশি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মনিটরিং সেল বসানো হয়েছে। পুণ্যার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়ক ও সড়কে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদ্‌যাপন করতে ৩ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় তৎপর রয়েছে।