বাসচালকদের যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতার বলি নাদিয়া!

বাসচালকদের যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতার বলি নাদিয়া!

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : রাজধানীর নদ্দা এলাকায় প্রায়ই বাসচালকদের মধ্যে যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা দেখা যায়। এমনকি পেছনের বাসকে যাত্রী তুলতে বাধা সৃষ্টির জন্য সড়কের মাঝখানে এসে সামনের বাস দাঁড়ায় আড়াআড়িভাবে। এ কারণে আগে পৌঁছানোর তাড়া থাকে চালকদের। বেপরোয়াভাবে বাস চালানোর কারণেই পিষ্ট হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী নাদিয়া সুলতানা। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে ঘাতক বাসটির চালক মো. লিটন (৩৮) ও হেলপার আবুল খায়েরকে (২২) সোমবার (২৩ জানুয়ারি) দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তবে চালক ও তাঁর সহকারী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মৃত্যুর দায় নিতে নারাজ।

এর আগে সোমবার দু’জনকে তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার এসআই মোহাম্মদ আল ইমরান রাজন আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। আদালতে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানিকালে বিচারক আসামিদের কাছে জানতে চান, তাঁদের কিছু বলার আছে কিনা?

তখন চালক লিটন বলেন, ‘আমার মাথাব্যথা করছিলো। এ কারণে পরিচিত চালক আরিফকে গাড়িটি দিয়েছিলাম। এরপর খবর পাই দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমার কোনও দোষ নেই। ঘটনা শোনার পর আমি আমার এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেই। সেখান থেকে আমাকে ধরে আনে। আমি ওই চালক আরিফকে ধরার অনুরোধ করছি।’

চালকের সহকারী আবুল খায়ের বলেন, ‘আমাদের বাসটি দাঁড়ানো ছিলো। মোটরসাইকেলের লোকটি হাত ছেড়ে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। আর মহিলাকে কী জানি দেখাচ্ছিলেন। হাতছাড়া থাকার কারণে মোটরসাইকেলটি পড়ে যায়। পরে আমাদের গাড়ির পেছনের চাকায় ধাক্কা লাগে।’

তবে পুলিশ বলছে, ঘটনার সময় বাস চালাচ্ছিলেন লিটনই। বাঁচার জন্য তিনি মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি আবদুল আহাদ জানান, সোমবার সকালে চালক ও হেলপারকে মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকার প্রিয়াঙ্কা হাউজিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। বাস মালিকের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছিলেন ঘটনার সময় চালক ছিলেন লিটন। অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে তিনি বাঁচার চেষ্টা করছেন। তিনি আরও বলেন, জব্দ গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী নাদিয়া সুলতানার মৃত্যুর প্রতিবাদ, ক্ষতিপূরণ ও চালক-হেলপারের বিচারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিমানবন্দরের অদূরে কাওলা এলাকায় নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিমানবন্দর সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।

নাদিয়া সুলতানার বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন পরিবার নিয়ে নারায়ণগঞ্জে বাস করেন। নাদিয়া পড়ালেখা করতেন ঢাকার নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ কারণে উত্তরা-৯ নম্বর সেক্টরে মেয়েদের একটি মেসে উঠেছিলেন। রোববার দুপুরে বন্ধুর মোটরসাইকেলে নদ্দা এলাকার যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে এলে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের একটি বাস পেছন থেকে তাঁদের ধাক্কা দেয়। ছিটকে পড়লে নাদিয়ার মাথার ওপর দিয়ে বাসের চাকা চলে যায়। এতে প্রাণ হারান তিনি। অবশ্য মোটরসাইকেলের চালক মেহেদী হাসানের তেমন আঘাত লাগে নি। তিনিও নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ঘটনার পরপরই দুর্ঘটনায় দায়ী বাসটি জব্দ করা গেলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় নিহতের বাবা জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে ভাটারা থানায় মামলা করেন। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওইদিন বিকেলে বিমানবন্দর সড়কের কাওলা এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ তাঁদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়।

সোমবার দুপুরে আবারও কাওলা এলাকায় সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নাদিয়ার মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ ও চালক-হেলপারের বিচারের দাবি তোলেন তাঁরা। এ ছাড়া নদ্দা এলাকার বাস স্টপেজ নাদিয়ার নামে করার দাবিও করেন শিক্ষার্থীরা। সড়কে বিক্ষোভ করার কারণে বিমানবন্দর সড়কে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এতে যানজট সৃষ্টি হয়। পরে চালক ও হেলপারের গ্রেপ্তারের খবর শুনে সড়ক ছেড়ে দেন তাঁরা। এর আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকও করেন পুলিশ সদস্যরা।

পুলিশের দক্ষিণখান জোনের সহকারী কমিশনার রাকিবা সুলতানা বলেন, রাস্তায় নামার পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা হয় বারবার। চালক ও হেলপার গ্রেপ্তার করার বিষয় জানিয়ে তাঁদের বোঝানো হয় নানাভাবে। এর পর দুপুর সোয়া ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা রাস্তা থেকে সরে যান।

বাসচালক লিটনের গ্রামের বাড়ি ভোলার ইলিশা এলাকায় ও সহকারী আবুল খায়েরের ভেদুরিয়ায়। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ঠিক করেছেন বিচারক।