ভারতে প্রথম দফায় লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু ১৯ এপ্রিল

ভারতে প্রথম দফায় লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু ১৯ এপ্রিল

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : ভারতে সাধারণ নির্বাচন শুরু হচ্ছে ১৯ এপ্রিল থেকে। ৭ ধাপের এই নির্বাচন শেষ হবে পহেলা জুন। ভারতে শাসনভার কাদের হাতে থাকবে– পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভা নির্বাচনে জয়-পরাজয়ই তা নির্ধারণ করবে।

বিপুল সংখ্যক ভোটার এবারের নির্বাচনে ভোট দেবেন। ফলে এ নির্বাচন হতে চলেছে বিশ্বের এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় নির্বাচন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয় মেয়াদে জয়ী হওয়ার আশা করছেন।

সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলো বলছে, মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও এর মিত্ররা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে জয়ী হবে।

লোকসভার সবচেয়ে বড় দলের নেতা বা জোটের নেতা সাধারণত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভা গঠন করেন, যাঁরা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকেন।

২০১৯ সালের নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একাই ৩০৩টি আসন পেয়েছিলো। আর বিজেপি’র জোট ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটি অ্যালায়েন্স পেয়েছিল ৩৫২টি আসন।

এবারের নির্বাচনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ বৃহত্তম বিরোধীদল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষ থেকে। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) জোটে এরই মধ্যে ২৪টির বেশি রাজনৈতিক দল যোগ দিয়েছে।

এই জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আছেন কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং দুই ভাই বোন রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, যাঁদের বাবা রাজীব গান্ধী ছিলেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমানে কারাবন্দি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টিও (আপ) এ জোটে আছে। সঙ্গে আছে আরও কিছু শক্তিশালী আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল।

সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে আম আদমি পার্টির তিন নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। দলটি বলছে, মোদি ও বিজেপি আম আদমির নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। তবে বিজেপি এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করতেই পারেন যে, ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কারণে বিশ্বে দেশটির অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চায় চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে তাঁদের মিত্রদেশ করে রাখতে।

সম্প্রতি মোদি ভারতের ৮০ কোটি গরিবের জন্য একাধিক উদার কল্যাণমূলক কর্মসূচি চালু করেছেন। এর মধ্যে বিনামূল্যে শস্য সরবরাহ এবং কম আয়ের পরিবারের নারীদের মাসে ১ হাজার ২৫০ রূপি ভাতা দেওয়ার মতো বিষয় রয়েছে।

অপরদিকে কংগ্রেস তাদের ইশতেহারে বলেছে, ভারতে এখন বেকারত্বের হার অনেক। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। ইশতেহারে বাড়তি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীদের ভাতা বৃদ্ধি এবং কলেজ উত্তীর্ণদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

ভারতকে স্বৈরাচারের পথ থেকে সরিয়ে আনা হবে এমন প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে কংগ্রেস।

আন্তর্জাতিক নাগরিক অধিকার সংস্থা ফ্রিডম হাউজ বলেছে, বিজেপি সরকারের সমালোচনা করা ব্যক্তিদের, বিশেষ করে সাংবাদিকদের হয়রানি করার ঘটনা বাড়ছে। সংস্থাটি ভারতকে ‘আংশিকভাবে স্বাধীন’ হিসাবে শ্রেণিভুক্ত করে।

ভারতজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ৭টি তারিখে ভোটগ্রহণ চলবে। প্রথম দফার ভোট হবে ১৯ এপ্রিল। এরপর ২৬ এপ্রিল, ৭ মে, ১৩ মে, ২০ মে, ২৫ মে’র ভোটের পর পহেলা জুন সর্বশেষ দফার ভোট হবে। ফল ঘোষণা হবে ৪ জুন।

লোকসভা আসন কম এমন কয়েকটি রাজ্যে মাত্র একদিনই ভোট হবে। কিন্তু যেসব রাজ্যে আসন বেশি সেখানে কয়েক দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে।  

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভারতের জনসংখ্যা। এর সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনের সময়ও দীর্ঘ হয়েছে। যেমন : ১৯৮০’র দশকে ভোটের পুরো সময়টা ছিলো মাত্র চারদিন, ২০১৯ সালে তা দাঁড়ায় ৩৯ দিনে, আর ২০২৪ সালে এসে ভোট হচ্ছে ৪৪ দিনব্যাপী।

মোট ৫৪৩টি লোকসভা আসনে এ নির্বাচনের পাশাপাশি বিধানসভা নির্বাচন হবে ৪ রাজ্যে। একইসঙ্গে বিধানসভা উপনির্বাচন হবে ১৩টি রাজ্যে।

একাধিক দফায় ভোটগ্রহণের মূল কারণ হচ্ছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিপুল সংখ্যক কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করতে হয়। নির্বাচনি সহিংসতা প্রতিরোধ থেকে শুরু করে ভোট জালিয়াতি ঠেকাতে মাঠপর্যায়ে তাঁরা তৎপর থাকেন।

ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তাকর্মীদের পর্যাপ্ত উপস্থিতি নিশ্চিত করতেই ভোটগ্রহণ ধাপে ধাপে করা হয়।

ভোটদানের জন্য লাখ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে। ভোটারেরা এই যন্ত্র ব্যবহার করে প্রার্থীদের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে পারবেন কিংবা উল্লেখিত প্রার্থীদের ‘কেউ না’ বিকল্পটি বেছে নিতে পারবেন।

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটিরও বেশি। এর মধ্যে ৯৬ কোটি ৯০ লাখ ভোটার এবারের নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, যা বিশ্বের জনসংখ্যার হিসাবে ৮ জনে ১ জন।

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশেরও বেশি ভোটার পাঁচ বছরের জন্য পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৫৪৩ জন সদস্যকে নির্বাচিত করবেন।

ভোটারদেরকে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে। তাঁদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে। ভোটার তালিকায় নাম থাকতে হবে এবং বৈধ ভোটার পরিচয়পত্র থাকতে হবে।

বিদেশে বাস করা ১ কোটি ৩৪ লাখ ভারতীয়ও ভোট দিতে পারবেন। তবে ভোট দেওয়ার জন্য তাঁদেরকে নিবন্ধন করতে হবে এবং ভারতে আসতে হবে।

লোকসভায় মোট ৫৪৩ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গড়তে কোনও দল বা জোটকে কমপক্ষে ২৭২টি আসন পেতে হবে।

লোকসভার সদস্যদের ৫ বছর মেয়াদে নির্বাচিত করা হয়। প্রত্যেক সদস্য একটি নির্দিষ্ট নির্বাচনি এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন। বিজয়ী নির্ধারিত হয় সর্বাধিক ভোট পাওয়া প্রার্থীর মাধ্যমে।

১৩১টি আসন আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর জন্য সংরক্ষিত। এই গোষ্ঠীগুলোকে সরকার পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত করে। ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশই তাঁরা।

নারীদের জন্য মোট আসনের এক-তৃতীয়াংশ বরাদ্দের আইন ভারতে পাস হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নে আরও কয়েক বছর লাগবে।

ভারতের আয়তন ৩২ লাখ বর্গকিলোমিটার। নির্বাচনি নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি মানব বসতিতে একটি করে পোলিং বুথ থাকতে হবে।

২০১৯ সালের নির্বাচনে গুজরাট রাজ্যে গির জাতীয় উদ্যানের প্রত্যন্ত বন এলাকায় বাস করা একজনের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিলো।

এবার অরুণাচল প্রদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে একজন নারী ভোটারের ভোটগ্রহণের জন্য নির্বাচনি কর্মকর্তাদেরকে ২৪ মাইল পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে যেতে হবে।