শিক্ষকের গলায় জুতার মালা : দোষী শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল, এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও গভর্নিং বডিকে শোকজ।

শিক্ষকের গলায় জুতার মালা : দোষী শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল, এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও গভর্নিং বডিকে শোকজ।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; নড়াইল : নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা দিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মো. রহমাতুল্লাহর ছাত্রত্ব বাতিল করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ ছাড়া মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও নির্লিপ্ততার কারণে কলেজের পরিচালনা কমিটিকে (গভর্নিং বডি) শোকজ করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আতাউর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। 

তিনি জানান, গতকাল বুধবার রাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৯তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মশিউর রহমান।

সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অধ্যক্ষ লাঞ্ছনার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে খুলনা সরকারি ব্রজলাল (বিএল) কলেজের শিক্ষার্থী মো. রহমাতুল্লাহর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের সম্মান শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। 

এ ছাড়া ওই ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় নেতিবাচক ভূমিকা পালনের জন্য মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আখতার হোসেনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কেনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সেই মর্মে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই ঘটনায় নির্লিপ্ততার কারণে কলেজ গভর্নিং বডিকে শোকজ করা হয়েছে। এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদকে শোকজের উত্তর দিতেও বলা হয়েছে।

এর আগে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অপদস্থ করার ঘটনায় গত ২৮ জুন তদন্ত কমিটি গঠন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন খুলনা সরকারি ব্রজলাল (বিএল) কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ আতিকুজ্জামান, কমিটির সদস্য ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন দপ্তরের পরিচালক এ এস এম রফিকুল আকবর, কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন খুলনা আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক আ স ম আবদুল হক।

গত ১৮ জুন নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করা হয়। এর আগের দিন ১৭ জুন ওই কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুকে ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে প্রণাম জানিয়ে ছবিসহ একটি পোস্ট দেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কলেজ শিক্ষক, ওই শিক্ষার্থীর বাবা ও কলেজ পরিচালনা পরিষদের কয়েকজন সদস্যকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে শিক্ষার্থীকে তাঁদের কাছে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ সদস্যরা ওই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যেতে চাইলে উত্তেজিত ছাত্র ও বহিরাগতরা বাধা দেন। তখন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়। বিকেল চারটার দিকে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং ওই শিক্ষার্থীকে কলেজের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে বের করা হয়। নিচতলার কলাপসিবল গেটের সামনে আনার পর তাঁদের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় এসপি ও ডিসি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫ জন।