স্বাস্থ্যকর ও অস্বাস্থ্যকর তেল

স্বাস্থ্যকর ও অস্বাস্থ্যকর তেল

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : রান্নার সব উপাদানই শরীরে প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে তেলও আছে। আর কয়েকটি তেল বেশি উপকারী। ক্যালরির পার্থক্য ছাড়াও রান্নার তেলে রয়েছে ভিন্ন পুষ্টিগুণ, বিশেষত চর্বির যৌগ। এই বিষয়ে মার্কিন পুষ্টিবিদ মেলিসা রিফকিন ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, কিছু তেলে আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাটয়ের মাত্রা বেশি, কিছু তেলে আবার স্যাচুরেইটেড ফ্যাট বেশি। এমনকি আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাটয়ের মধ্যে বিভিন্ন ভাগ রয়েছে। যেমন- মনোআনস্যাচুরেইটেড এবং পলিআনস্যাচুরেইটেড।

তাই স্বাস্থ্যকর রান্না করতে কোন তেল বেশি ভালো সেটার একটা ধারণা থাকার প্রয়োজন রয়েছে।

যেসব তেল স্বাস্থ্যকর :

এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল :
রান্নায় এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করা সবচেয়ে নিরাপদ। তা ছাড়া ঠাণ্ডা বা গরম খাবার তৈরি এমনকি বেইক করা খাবারেও এই তেল ব্যবহার করা যায়। এতে আছে অসম্পৃক্ত বা আনস্যাচুরেইটেড চর্বি এবং ভিটামিন ই।

এই তেলে রয়েছে ‘অলিয়েক অ্যাসিড’ নামক আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাট।। এই মনোআনস্যাচুরেইটেড চর্বি ইনসুলিন প্রতিরোধের বিরুদ্ধে এবং প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে।

রিফকিন আরও বলেন, তাতে আরও রয়েছে ভিটামিন ই, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং অনেক রোগ ও অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।

অলিভ অয়েল দিয়ে সালাদের ড্রেসিং তৈরি, মাঝারি তাপে সওতে সবজি তৈরি করা অথবা বেইক করার সময় বাটারের পরিবর্তে ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

উচ্চ অলিয়েক সমৃদ্ধ সূর্যমুখীর তেল :
‘আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাটস’ থাকার কারণে এই তেল স্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত। লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে, এই আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাটসয়ে প্রাথমিকভাবে ওমেগা-সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডস থাকে; যা কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

রিফকিন বলেন, যদিও ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডস শরীরের জন্য অপরিহার্য। তবে অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে প্রদাহ বৃদ্ধি পায় এবং নানান স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অন্যদিকে উচ্চ অলিয়েক সমৃদ্ধ হওয়াতে সূর্যমুখীর তেল ওমেগা-সিক্স গ্রহণের ক্ষেত্রে উপকারী ভূমিকা রাখে। এই দুই উপাদানের সমন্বয়ে কারণে প্যান ফ্রাই অথবা সওতে এবং বেইক করা খাবার তৈরিতে বাটারের ভালো বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

তিলের তেল :
এই তেলে রয়েছে কিছুটা বাদামের স্বাদ। যে কারণে রান্নায় ও বেকিংয়ে কম ব্যবহার হয়। তবে এটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

তিলের তেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসয়ের ভালো উৎস। যা দেহকোষ সুস্থ রাখে। এই তেলে আছে প্রদাহনাশক উপাদান; ফলে হৃদরোগ সংক্রান্ত অসুস্থতা যেমন আথারোস্ক্লেরোসিস বা প্লাক জমে ধমনী আটকে যাওয়ার ঝুঁকি কমায়।

এশিয়া অঞ্চললের অনুপ্রাণিত খাবার যেমন : স্টির ফ্রাই এবং নুডলস ডিশ রান্নায় তিলের তেল যোগ করা খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে তোলে।

এ ছাড়া খাবার মেরিনেইট করতে বা ‘ডিপস’ তৈরি করতে এই তেল ব্যবহার করা যায়।

চিনা বাদামের তেল :
কিছু ক্ষতিকর দিক থাকলেও এর রয়েছে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা। প্রথমত, এটি অলিয়েক অ্যাসিড সমৃদ্ধ; যা আমাদের খাবার তালিকা রাখার জন্য উপকারী।

চিনা বাদামের তেলে রয়েছে ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এ ছাড়া ‘আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

যদিও রয়েছে প্রদাহজনক উপাদান ওমেগা-সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডস। ওমেগা থ্রিসয়ের অভাবে অধিক ওমেগা সিক্স গ্রহণ স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

তাই ওমেগা সিক্স গ্রহণের উৎস সীমিত রাখা ভালো।

অস্বাস্থ্যকর তেল :

পাম অয়েল :
যদিও রান্নায় কোন তেল ব্যবহার করা হচ্ছে, তা এককভাবে স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে না। তবে এটি অনেক ক্ষেত্রেই উদ্বেগ বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

যেমন : এতে স্যাচুরেইটেড ফ্যাটসয়ের ঘনত্ব বেশি যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

নিউ ইয়র্কয়ের দি নিউট্রিশন কোয়ালিশনয়ের করা সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রশ্ন রাখা হয়, স্যাচুরেইটেড ফ্যাটস আসলে কতটা ক্ষতিকর? আর যাই হোক আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাটসয়ের মতো উপকার তো দেয় না।

তাই খাদ্যে পাম তেল সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করার পরমর্শ দেন, মেলিসা রিফকিন।

পাম তেল দিয়ে রান্না করা না হলেও এটি সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার তৈরি যেমন : কেক, পিৎজা, বিস্কুট, চকোলেট ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

সয়াবিন তেল :
সয়াবিন উদ্ভিদ থেকে গ্রহণ করা হয় এই তেল। প্রক্রিয়াজাতভাবে তৈরি এই তেলের ‘স্মোক পয়েন্ট’ ২০৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গবেষণায় অনুযায়ী স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়।

‘পাবমেড’ সাময়িকীতে প্রকাশিত ‘ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া’র মলিকিউলার বিভাগ পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, সয়াবিন স্থূলতা এবং গ্লুকোজ অসহিষ্ণুতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চমাত্রার ওমেগা সিক্স সমৃদ্ধ সয়াবিন তেল হজমের জটিলতা যেমন- কোলাইটিসয়ের মতো পাচক রোগের অন্যতম কারণ।

নারিকেল তেল :
উচ্চ ঘনত্বে স্যাচুরেইটেড চর্বি সমৃদ্ধ। যদিও এই চর্বি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে সুস্থ থাকতে পরিমিত গ্রহণ করা প্রয়োজন।

সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হেল্থ সিস্টেম ও ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, নারিকেল তেলের মাধ্যমে উচ্চমাত্রায় এলডিএল (খারাপ) এবং এইচডিএল (ভালো) কোলেস্টেরল গ্রহণ করা হয়।

যদিও এইচডিএর কোলেস্টেরল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে এলডিএলয়ের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে পারে না।

তাই নারিকেল তেল পরিমিত গ্রহণ করাই ভালো।

ছবি : পেক্সেল্স ডটকম।