৪ মিনিটের বিরল মহাজাগতিক ঘটনায় অভিভূত দর্শনার্থীরা

৪ মিনিটের বিরল মহাজাগতিক ঘটনায় অভিভূত দর্শনার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : উত্তর আমেরিকার কোটি কোটি মানুষ সোমবার (৮ এপ্রিল) পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হলেন। ৪ মিনিটের মহাজাগতিক এ বিরল ঘটনায় এদিন বিশালকার সূর্যকে ঢেকে ফেলে তুলনামূলক ক্ষুদ্রাকার চন্দ্র। এক পর্যায়ে দিনের আলো নিভে গিয়ে চারদিক ঘন অন্ধকারে ঢেকে যায় আর হাজার হাজার মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। বিরল এ দৃশ্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করেছে। খবর বিবিসি ও এপি’র।

উত্তর আমেরিকার মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেখা গেছে এই পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ।

দেশ তিনটির ১৫৫ মাইল প্রশস্ত কিন্তু ৪০০০ মাইলেরও বেশি লম্বা ফিতার মতো একটি ভূখণ্ডজুড়ে কয়েক কোটি মানুষ বিরল এই দৃশ্য উপভোগ করেছেন। মেক্সিকোর মাজাতলান শহরের উষ্ণ বালুর সৈকত থেকে শুরু হয়ে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের বিপুল জলরাশির ওপরের আকাশ অন্ধকার করে দিয়ে কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের সমুদ্র তীরে গিয়ে শেষ হয় এই বিশেষ ঘটনা।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা আগেই জানিয়েছিলো, এই তিন দেশে ৩ কোটি ১৬ লাখ মানুষ এই সূর্যগ্রহণ উপভোগ করতে পারবে।

মেক্সিকোর স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৭ মিনিটে মেক্সিকোর পশ্চিম উপকূলের মাজাতলান শহরের কাছ থেকে প্রথম এই সূর্যগ্রহণ প্রত্যক্ষ করা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে মনে হচ্ছিলো চাঁদের কিনারাটি সূর্যকে একটু স্পর্শ করেছে মাত্র, কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সূর্যকে গ্রাস করতে শুরু করে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহটি আর শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি ঢেকে দিলে হঠাৎ করেই অন্ধকার নেমে আসে। এ সময় উল্লাসে ফেটে পড়েন সূর্যগ্রহণ দেখতে জড়ো হওয়া হাজার হাজার মানুষ।

চাঁদের কিনারা দিয়ে সূর্যের আলোকচ্ছটা (করোনা) বের হওয়ায় এক অপার্থিব দৃশ্য তৈরি হয়। এরপর আসে ‘ডায়মন্ড রিং’এর বিরল মুহূর্ত।

এ সময় হঠাৎ তাপমাত্রা কিছুটা নেমে যায়, প্রাণীরা চুপ হয়ে যায়, পাখিরা ওড়াউড়ি করে বাসায় ফেরার তোড়জোড় শুরু করে দেয়। দিনের আকাশেই তারা দেখা যেতে শুরু করে।

মেক্সিকোর উপকূলীয় শহর থেকে সূর্যগ্রহণের পথ এগিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। টেক্সাস অঙ্গরাজ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে। সূর্যগ্রহণের সময় কয়েকশ মার্কিন জুটি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ৩টা ১৩ মিনিটে দেশটির মধ্যপশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ওহাইও অন্ধকারে ঢেকে যায়। এখানে আতশবাজি ফুটিয়ে উল্লাস করে সূর্যগ্রহণ দেখতে আসা লোকজন।

যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলীয় শহর নিউইয়র্কে কয়েকশ মানুষ ম্যানহ্যাটনের আকাশচুম্বী ভবন অ্যাজের একটি উঁচু বড় বারান্দায় বসে সূর্যগ্রহণ উপভোগ করে। অবশ্য শহরটি থেকে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যায় নি। ঈদের চাঁদের মতো সূর্যের একটি অংশ দৃশ্যমান হয়েছিলো। এ সময় অপার্থিব এক মৃদু আলোতে ছেয়ে যায় পুরো শহর।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের দিক দিয়ে সূর্যগ্রহণ কানাডায় প্রবেশ করে। এখানে সীমান্তের উভয়পাশে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে গ্রহণ উপভোগ করে। তবে এখানে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ কিছুটা বিঘ্ন ঘটালেও পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় মেঘ সরে যায়। 

এরপর মন্ট্রিয়ল শহর হয়ে সূর্যগ্রহণ এগিয়ে যায় আরও উত্তর দিকে। মন্ট্রিয়লের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাঠে একসঙ্গে ২০ হাজার মানুষ পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ উপভোগ করেন। এই পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ শেষ দেখা যায় কানাডার পূর্ব উপকূলের নিউফাউন্ডল্যান্ডের ফোগো দ্বীপ থেকে। ফেলে আসা পথের বিভিন্ন এলাকার তুলনায় এখানে অপেক্ষাকৃত কম মানুষ বিরল এই মহাজাগতিক দৃশ্য দেখতে জড়ো হয়েছিলেন।

প্রতি ১১ থেকে ১৮ মাসে বিশ্বের কোথাও না কোথাও পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ ঘটে। তবে তা প্রায়ই লক্ষ লক্ষ মানুষের পথ অতিক্রম করে না। যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ ২০১৭ সালে এর স্বাদ পেয়েছিলো। এ রকম আরেকবার পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ মার্কিন নাগরিকেরা দেখবেন ২০৪৪ সালে।