জঙ্গিদের হুমকির পর নিরাপত্তা চেয়েছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষ করে উগ্রবাদী ও মৌলবাদী সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত অ্যাকাউন্ট থেকে প্রাণনাশের হুমকির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জীবনের নিরাপত্তার জন্য আবেদন করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একদল শিক্ষার্থী।
তাঁরা জানান, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও সাম্প্রদায়িক উসকানিতে অভিযুক্ত এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুক্ত পেজ বাঁশেরকেল্লা, টেলিগ্রাম চ্যানেলসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে শিক্ষার্থীদের নাম ও ছবি প্রচার শুরু করেছে।
অতীতে এই সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া বুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলার সঙ্গে এর মিল রয়েছে উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, এসব হুমকিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার কারণ রয়েছে।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) বুয়েটের শহিদ মিনারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে হুমকির স্ক্রিনশটগুলোসহ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুল আলম, অরিত্র ঘোষ, সাগর বিশ্বাস জয় ও অর্ঘ্য দাস এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর স্বপ্নিল ও মিশু দত্ত।
কয়েকদিন আগে তাঁরা উপাচার্য বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন, যেখানে তাঁরা ২১ জন শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করেন, যাঁরা একই ধরনের হুমকির সম্মুখীন হয়েছিলেন। এরপর তাঁরা তাঁদের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি দেন।
তাঁরা বলেন, মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে মানববন্ধনে অংশ নেওয়ায় অতীতে আমাদের ওপর মৌখিক আক্রমণ হয়েছে, যা স্পষ্টতই মত প্রকাশের স্বাধীনতার লঙ্ঘন।
২০১৩ সালে পৃথক হামলায়, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করা হয়। এক ছাত্র নিহত ও অপর একজন বেঁচে যান। শিবিরের হামলার শিকার হওয়া এই দুই ছাত্রনেতা মৌলবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।
তাঁরা আরও বলেন, তন্ময় আহমেদ ও আরিফ রায়হান দীপ নামে ওই দুই ছাত্রনেতার ওপর হামলার আগে বাঁশেরকেল্লা ও আমার দেশ পত্রিকা তাঁদের 'ইসলামের শত্রু' আখ্যা দিয়ে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালিয়েছিলো।
হলের ভেতরে মৌলবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী এক সহপাঠীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে দীপ মারা গেলেও তন্ময়কে শিবির কর্মীরা নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করেছিলো বলে জানা যায়।
এসব হামলার কথা স্মরণ করে তাঁরা বলেন, আমাদের পূর্বসূরীদের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্ন তৈরি হয়। দুজনেই জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং এই দলগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন। একইভাবে 'বাঁশের কেল্লা' আমাদের টার্গেট করেছে। আমাদের বিস্তারিত তথ্যসহ পোস্টগুলো এরই মধ্যে টেলিগ্রাম চ্যানেলের মতো বিভিন্ন যোগাযোগ চ্যানেলের মাধ্যমে এই দলগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
টাঙুয়ার হাওরে বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীসহ জঙ্গিবাদে জড়িত ৩৪ জন শিক্ষার্থীর গোপন বৈঠকের খবরের বরাত দিয়ে তাঁরা বলেন, এতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা পর তারা ছাত্রদের নিয়ে একটি সভায় যোগ দিয়েছিলেন। যা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত।
তাঁরা আরও বলেন, এমনকি কিছু ফেসবুক গ্রুপেও আমরা দেখতে পেয়েছি যে, আমাদের নিয়ে অবমাননাকর পোস্ট করা হয়েছে এবং আমাদের কিছু সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীকে টার্গেট করা হয়েছে। এই গ্রুপগুলোর পোস্টগুলোতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা জঙ্গিদের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই স্থান ব্যবহার করছে, এই কর্মীদের জড়িত থাকার আরও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।