প্রথম আলোয় ছবিটি প্রকাশে আসল দায়ী কে?
কালাম আঝাদ’র কলাম : আমরা যাঁরা গণমাধ্যমে কাজ করি, তাঁরা সকলেই জানি, একজন প্রতিবেদক প্রতিবেদন সম্পন্ন করে অফিসে মেইলযোগে পাঠিয়ে দেন। আর যাঁরা প্রধান কার্যালয়ে রিপোর্টিং করেন, তাঁরা অফিসে গিয়েই কম্পোজ করে প্রতিবেদন জমা দেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশের জন্য মোবাইল ফোনেও প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেন। বা কিছুক্ষেত্রে কিছু প্রতিবেদক বাসা থেকে বা অন্য জায়গা থেকেও প্রতিবেদন কম্পোজ করে মেইলযোগে পাঠিয়ে দেন। তবে তা নেহায়েত কম। তো প্রধান কার্যালয়ের বাইরের একজন প্রতিবেদকের প্রতিবেদনের তথ্য সম্পর্কে ফোন দিয়ে রিচেক (পুনরায় পরীক্ষা) করার রীতি রয়েছে। অথবা কোনও তথ্যে অসঙ্গতি থাকলে তো অবশ্যই তাঁকে ফোন দিয়ে নিশ্চিত হওয়া হয়। এক্ষেত্রে অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে বার্তা সম্পাদক (নিউজ এডিটর), প্রধান প্রতিবেদক (চিফ রিপোর্টার), অনলাইন চিফ, সংশ্লিষ্ট সাব এডিটর এবং অন্য যদি কেউ থেকে থাকেন, তবে তিনি এ প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধ। যেমন মাঝেমধ্যে গ্রাফিক্স ডিজাইনাররাও ছবির সঙ্গে ক্যাপশন দিতে গিয়ে তাঁদের মতের প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন (তবে সংখ্যায় তা খুবই কম)। তবে যতো যাই হোক, স্বাধীনতা নিয়ে প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির সঙ্গে ছবিটিতে যে ক্যাপশন জুড়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁর দায়ভার সংশ্লিষ্ট সাব এডিটরের তো অবশ্যই। যিনি অনলাইনে এ নিউজটি প্রকাশ করেছেন, তাঁকেই এর দায় নিতে হবে। আর সংশ্লিষ্ট ওই সাব এডিটর (বা পদ যাই হোক না কেনো) যদি কারও নির্দেশে এটি প্রকাশ করে থাকেন এবং এটি যদি কেউ করে দিয়ে থাকেন, তাহলে মূল অপরাধী হবেন তিনিই। যদিও রাষ্ট্রের জন্য কোনও স্পর্শকাতর বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়, এমন বিষয় উঠে এলেই কেবল সম্পাদকের কাছে তা পাঠানো হয় এবং তখন সম্পাদকের অনুমোদনক্রমেই তা কেবল প্রকাশিত হয়। অন্যথায় যা কিছুই প্রকাশিত হয়, তা প্রকাশ করেন নিউজরুমের সংশ্লিষ্টরাই। তবে সম্পাদক সম্পাদকীয় নীতি অবশ্যই তাঁর কর্মীদের বলে দিয়ে থাকেন, এরপরও যদি কোনও কর্মী নিজের দোষে দুষ্ট হয়ে এ ধরনের কাজ করে থাকেন, তাহলে সেই অপরাধ তার। আর প্রথম আলোতে যে ছবিটি ক্যাপশন সহকারে প্রকাশিত হয়েছে, সেটি প্রথম আলোর সম্পাদককে দেখানো হয় নি; এটি মোটামুটি নিশ্চিত। কারণ এটি জ্যেষ্ঠ কেউ দেখলে এভাবে প্রকাশ করতে দিতেন না, আর এটি ১৭ মিনিট পর তুলে নিয়ে সংশোধনী দেওয়াটাই প্রমাণ করে যে, তা সম্পাদক তো নয়ই বরং জ্যেষ্ঠ কাউকেই দেখানো হয় নি। অথচ আমরা দেখলাম, স্বাধীনতার মতো একটি বিষয়ে ভুল ক্যাপশন প্রকাশের দায়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদক এবং সম্পাদকের নামে মামলা করা হলো। যদিও কয়েকজনকে অজ্ঞাত হিসেবেও রাখা হয়েছে। তবুও নাম উল্লেখ করে মামলা করার কারণে প্রথম আলো সম্পাদককে আগাম জামিন নিতে হয়েছে। আর প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামান কারাগারে যাওয়ার পর তবেই জামিনে মুক্ত হয়েছেন। অথচ তাঁদের দুইজনের কারোরই কিন্তু নিউজের ছবিটির ক্যাপশন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ কোনও দোষ নেই। যদিও অনেকে বলতে পারেন, শামসুজ্জামান ছোট বাচ্চাকে ১০ টাকা দিয়ে ছবি তুলেছেন। এক্ষেত্রে মূল বিষয় হলো : ছবি তোলার ক্ষেত্রে কিন্তু এ ধরনের ঘটনা হরহামেশাই ঘটে। তবে এক ছবিতে অন্য ক্যাপশনের মাধ্যমে অপব্যবহারটাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যা শামস করেন নি, যিনি অনলাইনে নিউজটি আপলোড করেছেন, তিনি করেছেন। বা কারোর নির্দেশে তিনি করতে বাধ্য হয়েছেন। সেটি হতে পারে নিউজরুমের অন্য কেউ।
যদিও প্রথম আলোর এ ঘটনায় গণমাধ্যমটি আরও একটু জনপ্রিয় হলো (যদিও ছোট গণমাধ্যম হলে সমস্যা হতো)। আর আওয়ামী লীগ চেষ্টা করেছে, যাতে অন্যান্য গণমাধ্যমকেও একটু ভয় দেখানো যায়।
তবে যতো যাই ঘটনা ঘটুক না কেনো, আসল কালপ্রিটকে কিন্তু আইনের আওতায় আনা জরুরি। এবং তাকে অবশ্যই প্রথম আলো থেকে ছাটাই করা অত্যাবশ্যকীয় (যদিও ইতোমধ্যেই তাকে ছাটাই করে দেওয়া হয়েছে বলেই মনে হয়)।
মূল কথা হলো : প্রকৃত অপরাধী শাস্তি পেলেই, তবে অপরাধের পরিমাণ কমে আসবে।
আর ‘স্বাধীনতা’ তো শুধু একটি শব্দ নয়, এটি একটি আবেগের নাম।