পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সহিসংতায় ১১ জন নিহত

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সহিসংতায় ১১ জন নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা) ১১ জন নিহত হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) অভিযোগ করেছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। খবর এনডিটিভির।

শনিবার (৮ জুলাই) রাজ্যে তিন স্তরের পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ চলে। এই ভোটের দিনেই প্রাণহানি ঘটলো রাজ্যে। বিভিন্ন জায়গায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তৃণমূল, কংগ্রেস এবং সিপিএমের কর্মীরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়েও উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

মুর্শিদাবাদে দুই তৃণমূল কর্মীকে খুন করা হয়েছে। কোচবিহারের ফলিমারি গ্রাম পঞ্চায়েতে ভোটেরহাট ৪/৩৮ নম্বর বুথে বিজেপির এজেন্ট খুন হয়েছেন। মালদহের মানিকচকে তৃণমূল কর্মী খুন হয়েছেন। উত্তর দিনাজপুরের চাপড়ায় তৃণমূলের এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

কোচবিহারের দিনহাটায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দুই বিজেপি কর্মী। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে চকমরিচায় দুই আইএসএফ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

এ ছাড়াও কোচবিহারের সিতাইয়ে বুথে আগুন লাগানো হয়েছে। পোড়ানো হয় ব্যালট পেপার। পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পর থেকেই রক্তপাত, সংঘর্ষ, বোমাবাজি, প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে রাজ্যে। নির্বাচনের দিনও সেই ছবি বদলালো না।

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ডাঙা ফরিদপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫২ নম্বর বুথে সকাল থেকে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত সাংবাদিক মোহাম্মদ খান। যে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় সাংবাদিক মোহাম্মদ খান ছাপ্পা ভোটের রেকর্ডিং করেছিলেন, সেই ফোন কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ৩০-৪০ জন মিলে তাঁকে মারধর করেন।

এদিকে রাজ্য নির্বাচন কমিশন (এসইসি) ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেছে।

এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস, ভারতীয় সেক্যুলার ফ্রন্ট এবং ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নিতে লড়াই দেখা যেতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে টিএমসি ও বিজেপি উভয় দলের জন্য এই নির্বাচন একটি কঠিন পরীক্ষা।

ফলে সবাই জয়ী হওয়ার চেষ্টায় থাকায় এমন সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

কোচবিহারের দিনহাটায় গুলিবর্ষণ :
কোচবিহারের দিনহাটার গিতালদহে ভোট চলাকালীন গুলি চালানোর অভিযোগ উঠলো। গুলিবিদ্ধ দুই বিজেপি কর্মী রাধিকা বর্মণ এবং চিরঞ্জিৎ কার্জি। ছাপ্পা ভোটের প্রতিবাদ করায় তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসকদল। রাধিকার বুকে গুলি লেগেছে। চিরঞ্জিতের পেটে লেগেছে গুলি। জখম দু’জনকে কোচবিহার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

মালদহে চললো গুলি :
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর মালিওর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মধ্যে সংঘর্ষ-গুলি চলেছে বলে অভিযোগ। একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দাবি।

বীরভূমে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ :
বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের রাজচন্দ্রপুরে বিজেপি এবং তৃণমূলের সংঘর্ষ। বাইকে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ। ১৪৭ নং বুথে ভোট প্রক্রিয়া বন্ধ। এলাকায় পুলিশের বিশাল বাহিনী।

মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর মালিওর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মধ্যে সংঘর্ষ-গুলি চলেছে বলে অভিযোগ। একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দাবি।

চাপড়ায় তৃণমূল কর্মীকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ :
উত্তর দিনাজপুরের চাপড়ার কল্যাণদহে তৃণমূল কর্মীকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল বাম এবং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের অভিযোগ, ভোট দিতে যাওয়ার সময় তাদের কর্মীদের ওপর আক্রমণ চালান বাম এবং কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। গুরুতর জখম ১১ জন তৃণমূল কর্মী। তাঁদের চাপড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। আমজাদ হোসেন নামে এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

গভর্নর সিভি আনন্দ বোস হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, নির্বাচন হতে হবে ব্যালটের মাধ্যমে, বুলেট নয়। রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় ৭৩ হাজার ৮৮৭টি আসনে সকাল সাতটায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। রাজ্যে ভোটার রয়েছেন পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ।

সকাল ৬টা নাগাদ ভোটকেন্দ্রের বাইরে দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। বৃষ্টির মধ্যেও লোকজনকে ভোট দিতে আসতে দেখা গেছে। টিএমসি জেলা পরিষদের ৯২৮টি আসন, পঞ্চায়েত সমিতিগুলির ৯ হাজার ৪১৯টি আসন এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬১ হাজার ৫৯১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

আর বিজেপি ৮৯৭টি জেলা পরিষদের আসনে, সাত হাজার ৩২টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে এবং ৩৮ হাজার ৪৭৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ২০১৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩৪ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলো।