বাংলা ভাইয়ের উত্থানকেও গুজব বলেছিলো বিএনপি
সম্পাদকীয় মত, বাঙলার কাগজ ও ডন : যুগে যুগে আমাদের দেশের সবগুলো সরকারই কিছু না কিছু ভুল করেছিলো। এসব ভুল তাঁরা করেছিলো, কারও পরামর্শে, নিজের ‘সম্মান রক্ষায়’ (অথচ ব্যবস্থা নিলে সম্মান রক্ষাটা দীর্ঘায়িত হতো) অথবা কোনও অবৈধ সুবিধা নেওয়ার মাধ্যমে। আমরা এক সময় দেখেছি, বিএনপির আমলে যখন মিডিয়া বাংলা ভাই তথা জঙ্গিবাদের উত্থানের বিষয়টি তুলে ধরে; তখন বিএনপি সরকার সেটিকে গুজব এবং মিডিয়ার সৃষ্টি বলেই উড়িয়ে দেয়। আর তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি বলেই পরে আমাদেরকে বড় ধরনের মাশুল দিতে হয়েছে। বর্তমানে আমাদের ব্যাংক খাতে বেশকিছু জালিয়াতির তথ্য দেশের বড় বড় গণমাধ্যমগুলোতেই এসেছে। আর এসব জালিয়াতি চাট্টিখানি কথাও নয়। বরং জালিয়াতিগুলোর পরিমাণ প্রায় অর্ধ লাখ কোটি টাকা। যা আমাদের ডিজিপির প্রায় ১ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং এই টাকা দিয়ে আমরা দুটি পদ্মা সেতু করতে পারতাম। অথচ এসব জালিয়াতদের রক্ষায়ই আমাদের কিছু পর্যায়ের লোকজন উঠেপড়ে লেগেছেন।
কী আর বলবো, বলুন! মনে হচ্ছে যেনো, সর্ষের ভেতরেই ভূত।
আচ্ছা, আমরা বলে বেড়াচ্ছি, কোনও গ্রাহককে ব্যাংকে গিয়ে বসে থাকতে হয় নি; সকল গ্রাহকই ব্যাংকে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে টাকা পেয়েছেন। ব্যাংকে কোনও তারল্য সঙ্কট নেই। আচ্ছা, এর সবগুলোই যদি সঠিক হবে, তাহলে ইসলামী ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হলো কেনো? আর এবিবির (অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ) বৈঠকেও কেনো সেটি নিশ্চিত করা হলো, ইসলামী ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক তারল্য সহায়তা দেবে?
এ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রশ্ন- কাদের বাঁচাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে এমন সহায়তা দেওয়া হচ্ছে? তাহলে কি আমরা সকলেই টাকার মাধ্যমে ম্যানেজ হয়ে গিয়েছি? অথচ আমাদের পাশের দেশ- ভারতে, ক্ষুদ্র জালিয়াতির ঘটনায়ও বড় ধরনের বিচার হয়।
সার্বিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে- বাংলাদেশ ব্যাংক কি জালিয়াতি শনাক্তকারী? নাকি জালিয়াতি হওয়া ব্যাংকগুলোকে রক্ষাকারী? না হয়, কোনও ব্যাংক বন্ধ হবে না, সবগুলোর অবস্থা ভালো আছে, এগুলো বলে কেনো জালিয়াতদের স্বস্তি দেওয়া হচ্ছে? গ্রাহকদের স্বস্তি দেওয়া হোক, সেটা ঠিক আছে; কিন্তু জালিয়াতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে? নাকি এতোদিনের কথাই সঠিক, যে, সকল ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক এমনকি গভর্নরেরাও টাকায় ম্যানেজ হয়ে গিয়েছিলেন। তাহলে বর্তমান গভর্নরের অবস্থা কি?
এ অবস্থায় আমরা বলতে চাই, সময় এসেছে দেশের অন্তত ১/২টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার। তাতে অন্তত ব্যাংকিং খাতে জালিয়াতি হতে হলেও বলে-কয়ে হবে।