ভারতে বৃষ্টি : সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত।
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলা কাগজ; কুলেন্দু শেখর দাস, সুনামগঞ্জ : গত কয়েকদিন ধরে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে অবিরাম বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে সুনামগঞ্জের নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এতে সুনামগঞ্জ শহরের নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করলেও এখন পানি কমতে শুরু করেছে।
এ ছাড়া, জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও শাল্লাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিলো এবং এখনো কিছু কিছু উপজেলায় পানি থাকার কারণে দুর্ভোগে আছেন মানুষ।
বিশেষ করে পানির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষজনের রোজগার বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
সবমিলিয়ে সুনামগঞ্জের ষোলঘর এলাকায় সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এবং গত ২৪ ঘণ্টায় শুক্রবার (২০ মে) সকাল ৯টা পর্যন্ত ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে জেলার ছাতক উপজেলায় সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে শহরের বিভিন্ন অলিগলি ও বাসাবাড়িতে এখনো পানি রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে আছেন সাধারণ মানুষ।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর, নবীনগর, ধারারগাও, জেলরোড, উত্তর আরপিন নগর, তেঘরিয়া ও বড়পাড়া এলাকার সড়ক ও কিছু ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে।
তবে সুনামগঞ্জ সদর ছাতক, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লা ও জামালগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় ছাতক সড়কে পানি উঠায় ছাতকের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও এখন সড়কে কিছুটা যানবাহন চলছে।
সুনামগঞ্জের কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৭৭৭ হেক্টর বোরো ধান, ৭৫ হেক্টর বাদাম, ৭৪ হেক্টর আউশ বিজতলা, ৬০ হেক্টর সবজি এবং ২০ হেক্টর আউশ ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৮০ লাখ টাকা হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মন্ডল বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের ফলে জেলার সদর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৪ শত পুকুরে পানি ঢুকে ৩৫ টন মাছ ও ৩০ লাখ পোনা বানের পানিতে ভেসে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় আড়াই কোটি টাকা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি এবং সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর তাহিরপুরের যাদুকাটাসহ অন্যান্য নদীর পানিও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সার্বিক ব্যাপারে জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, ইতিমধ্যে ছাতক, দোয়ারাবাজার, সদর ও তাহিরপুরে প্রায় ৮ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
‘ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারের মাধ্যমে প্রশাসন উদ্যোগে ১৪০ মেট্রিন টন জিআরের চাল, নগদ ১২ লাখ টাকা ও খাবারের ২ হাজার শুকনো প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।’
‘২৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এবং ২০টির মতো আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’