ডন প্রতিবেদক, রাজশাহী : ফুল ছিটিয়ে শরবত পান করিয়ে বর বরণ, বর-কনের বসার আসন সাজানো, অতিথি আপ্যায়নের প্যান্ডেলে আয়োজকদের ছোটাছুটি, পেছন দিকে বাবুর্চিদের ব্যস্ততা, দৌড়ঝাঁপ, হাঁকডাক। সব মিলিয়ে নারী ও শিশু-কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসন (সেফ হোম) রাজশাহী কার্যালয়টি হয়ে উঠল বিয়েবড়ি। দাওয়াত খেতে এলেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক, ইউএনও, ম্যাজিস্ট্রেট, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
১১ বছর থেকে এই সেফ হোমে অন্তরীণ জীবন কাটানো নারী অন্তরা বেগম ফজিলা ও শিরিন খাতুনের বিয়ে উপলক্ষে আজ শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) এই আয়োজন করেছিল কর্তৃপক্ষ। সেফ হোম সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী সেফ হোমটি জেলার পবা উপজেলার বায়া এলাকায় অবস্থিত।
সেফা হোমের উপতত্ত্বাবধায়ক লাইজু রাজ্জাক জানালেন অন্তরা ও শিরিনের জীবনকাহিনি। ২০১০ সালে রংপুর আদালতের মাধ্যমে শিরিন খাতুনকে রাজশাহী সেফ হোমে পাঠানো হয়েছিল। একই বছর অন্তরা বেগমকেও পঞ্চগড় আদালতের মাধ্যমে এই সেফ হোমে পাঠানো হয়েছিল। ঠিকানা বলতে না পারায় এঁদের পরিবারে পাঠানো সম্ভব হয়নি। মেয়ে দুটির বয়স এখন প্রায় ৩৩ বছর। এই প্রতিষ্ঠানে তাঁদের ১১ বছর পার হয়ে যাচ্ছে। তাঁদের বয়সও হয়ে যাচ্ছে। এই বিবেচনায় তিনি এই দুই মেয়ের বিয়ের জন্য এলাকায় ঘটক পাঠান। পেয়ে যান দুজন পাত্র। দেখাশোনার পর দুই মেয়ে দুই ছেলেকে পছন্দ করে বিয়ে করতে সম্মত হন।
লাইজু রাজ্জাক বলেন, শিরিন খাতুনের সঙ্গে ইসমাইল হোসেনের এবং অন্তরা বেগমের সঙ্গে মো. বিপ্লবের বিয়ে ঠিক হয়। এরপর তিনি বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং কমিটির সভায় তোলেন। কমিটির সভাপতি রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আবদুল জলিল যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিয়ের ব্যবস্থা করার অনুমতি প্রদান করেন। আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের জন্য রংপুর ও পঞ্চগড় আদালতে যেতে হয়। বিয়ের জন্য মেয়েদের নিজ জিম্মায় আদালত থেকে জামিন নিতে হয়। এ জন্য শিরিন ও অন্তরাকেও আদালতের কাছে আবেদন করতে হয়। দুই আদালতেই আইনজীবী নিয়োগ করতে হয়। এসব করতেই এক মাস লেগে যায়।
বর ইসমাইল হোসেন রাজশাহী শহরে অটোরিকশা চালান। তিন বছর আগে তাঁর আগের স্ত্রী মারা গেছেন। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার পিল্লাপাড়া গ্রামে। বর বিপ্লবের বাড়ি রাজশাহী নগরের বড় বোনগ্রাম দরুলের মোড়ে। তাঁর গরু-ছাগলের ব্যবসা রয়েছে। ১২ বছর আগে তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন।
বিয়ের দেনমোহর ঠিক করা হয় এক লাখ টাকা। এর মধ্যে নগদ এক হাজার টাকা। বিয়ের আসরের দোয়া শেষ করে জেলা প্রশাসক মো. আবদুল জলিল সাংবাদিকদের বললেন, এঁরা পারিবারিক বন্ধনে যাচ্ছেন। এতে আমরা খুশি। বিয়েতে দুই পক্ষের অতিথিসহ প্রায় ২০০ মানুষকে দাওয়াত করা হয়েছিল।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের রাজশাহী আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বাবুর্চি আকবর হোসেন বললেন, অতিথিদের জন্য তিনি ৪৫ কেজি খাসির মাংস, ২০ কেজি মাছ, ২২ কেজি চালের পোলাও, ৫ কেজি চালের সাদা ভাত রান্না করেছেন।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বরযাত্রীরা খেতে বসলেন। আয়োজকেরা তাঁদের পাতে যেচে যেচে খাবার তুলে দিতে থাকলেন। তাঁরা জামাই আদরের কোনো কমতি রাখলেন না। লাইজু রাজ্জাক বললেন, মেয়ে দুটি নিজের সংসারে সুখে থাকবে- এই তাঁর আনন্দ।