ভারতের পদ্মশ্রী সম্মাননা গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

ভারতের পদ্মশ্রী সম্মাননা গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ভারতে কতোবার গেছেন, তার কোনও হিসাব নেই। পড়াশোনার জন্যও এই শিল্পী একটা লম্বা সময় দেশটিতে ছিলেন। কয়েক দশক ধরে তো পেশাদারিভাবে গান গাইতে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর এবারের ভারত–যাত্রার প্রসঙ্গটা একেবারেই অন্য রকম—সম্মানের, গৌরবের এবং আবেগেরও। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই তা টের পেয়েছেন তিনি। কারণ, তাঁর এবারের যাত্রার সময় নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘পদ্মশ্রী পদকপ্রাপ্ত শিল্পী’। ভারত সরকার বাংলাদেশের রবীন্দ্রসঙ্গীতের বরেণ্য এই শিল্পীকে এ বছর পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করেছে। সোমবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে পুরস্কারটি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার হাতে তুলে দেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।

রবীন্দ্রসঙ্গীতের বরেণ্য শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরীর বন্যা ভারত সরকারের পদ্মশ্রী পুরস্কার পাচ্ছেন, খবরটি প্রথম জানা যায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে। সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে পুরস্কার প্রদানের পাশাপাশি নৈশভোজেও অংশ নেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। তারই ফাঁকে কথা হয় বন্যার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই রোমাঞ্চিত। আনন্দিত এবং সম্মানিত বোধ করছি। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে পুরস্কারটা আমার কাছে ভীষণ গর্বের মনে হচ্ছে।’

পদ্মশ্রী পুরস্কার গ্রহণ করতে দিল্লির উদ্দেশে গত রবিবার ঢাকা ছাড়েন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। এবারের যাত্রার অভিজ্ঞতাটা একেবারে ভিন্ন রকম বলে জানালেন তিনি।

 কথায়–কথায় রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বললেন, ‘যাত্রা শুরুর পর থেকেই দারুণ সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছি। আমি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে এলাম, কর্তৃপক্ষ আমাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছে। বিমানবন্দর থেকে দিল্লির হোটেল পর্যন্ত সম্মানিত অতিথি হিসেবেই তাঁরা নিয়ে এসেছে। সব জায়গায় আমাদের পদ্মশ্রী অ্যাওয়ার্ডি, পদ্মশ্রী অ্যাওয়ার্ডি বলছে! এত আতিথেয়তা, এত সম্মান—সবকিছু আমার জীবনে একটা জ্বলজ্বলে অনুভূতি হয়ে থাকবে। মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা।’

রাষ্ট্রপতি ভবনে পদ্মশ্রী পদকপ্রাপ্তি অনুষ্ঠানে ভারতের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। বন্যা জানালেন, আগামী মাসে আবার দিল্লিতে যাবেন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। অন্য সময় যে ধরনের অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেন, এটি তেমনটা নয় বলে জানালেন। পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্তি উপলক্ষে প্রথমবার ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়া হয়েছে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার। সেই প্রসঙ্গ তুলে এনে এই শিল্পী বললেন, রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার ব্যাপারটাও আলাদা একটা অভিজ্ঞতা। এর আগে কোনও দিন যাওয়া হয় নি। রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নেওয়া—সবকিছু মিলিয়ে দারুণ ব্যাপার ঘটে গেলো।

বন্যার পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্তি বাংলাদেশের সঙ্গীতকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নেবে এবং শিল্পীদের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করবে। আগামী প্রজন্ম বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে আশার আলো ছড়াবে বলেও মনে করছেন তিনি। বন্যা বললেন, শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীত নয়, আমাকে সঙ্গীতের জন্য দেওয়া হয়েছে এই পুরস্কার। আমার জন্য ভালো লাগার ব্যাপার যেমন, তেমনি অন্যরাও ভীষণ অনুপ্রাণিত হবে। বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে এখন দারুণ সব কাজ হচ্ছে। সামনে আরও অনেক ভালো কাজ হবে। আমাদের তরুণেরা তো দারুণ আশা দেখাচ্ছে, অসাধারণ সব কাজ করছে। এই তরুণদের নিয়ে আমার আশাবাদ অনেক বেশি। তাঁরা অনেক দূর এগিয়ে নেবে। যাত্রা চলমান থাকবে। ভবিষ্যতে আরও ভালো ভালো কাজ হবে।

পদ্মশ্রী পুরস্কার পাবেন, কোনোদিন ভাবেন নি বাংলাদেশি এই সঙ্গীতশিল্পী। জীবনে এমনদিন কখনোই আসে নি। আসবে কীভাবে! ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার যে জীবনে প্রথমবার উঠলো তাঁর হাতে। জানুয়ারিতে পুরস্কারের তালিকাটা প্রকাশের পর থেকেই একের পর এক শুভেচ্ছা বার্তায় ভাসে বরেণ্য এই শিল্পীর মুঠোফোন। অনেকে সশরীর শুভকামনা ও অভিনন্দন জানাতে যান তাঁর লালমাটিয়ার সঙ্গীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’ কার্যালয়ে। কেউ আবার তাঁর বাড়িতে ছুটে যান প্রিয় শিল্পীর সম্মাননাপ্রাপ্তির খবরটি সামনাসামনি উদ্‌যাপন করতে।

পদ্মশ্রী পুরস্কার পাওয়ায় দায়বদ্ধতা অনেক বেড়ে গেলো বলে জানান বন্যা। তিনি বলেন, সত্যিই দায়িত্বটা অনেক বেড়ে গেলো। এখন যে সম্মান ও স্বীকৃতি দেওয়া হলো, তার যোগ্য যেনো হয়ে উঠতে পারি। আগামী দিনে ভালোভাবে যেনো সব কাজ করতে পারি। সবাই আমার জন্য যেনো দোয়া করেন।

দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অনেক ধরনের পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সঙ্গীতে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ২০১৬ সালে তিনি অর্জন করেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’। আর তিনি ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক, সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড, আনন্দ সঙ্গীত পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন। ভারতেও তিনি বেশকিছু পদক পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘বঙ্গভূষণ’। ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি বিভাগ থেকে ‘সঙ্গীত সম্মান পুরস্কার’ পেয়েছেন বন্যা।