অব্যবহৃত ডেটা পরবর্তী প্যাকেজের সঙ্গে যুক্ত হোক, চান ৮৮ শতাংশ গ্রাহক

অব্যবহৃত ডেটা পরবর্তী প্যাকেজের সঙ্গে যুক্ত হোক, চান ৮৮ শতাংশ গ্রাহক

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : দেশের প্রায় ৮৮ শতাংশ মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক চান, তাঁদের কেনা প্যাকেজের অব্যবহৃত ডেটা পরবর্তী যে কোনও প্যাকেজের সঙ্গে যুক্ত হোক।

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ কিনলে শুধু সে ক্ষেত্রে অব্যবহৃত ডেটা পরের প্যাকেজে যুক্ত হয়, যাকে বলা হয় ‘ক্যারি ফরোয়ার্ড’। জরিপে দেখা যাচ্ছে, এই নিয়মের পরিবর্তন চান গ্রাহকেরা।

গ্রাহকদের এই প্রত্যাশার বিষয়টি উঠে এসেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) পরিচালিত একটি অনলাইন জরিপে। মঙ্গলবার (৩০ মে) রাজধানীর রমনায় বিটিআরসির কার্যালয়ে ‘মোবাইল অপারেটরসমূহের সেবা (প্যাকেজ এবং ডেটার মূল্য) সংক্রান্ত’ এক মতবিনিময় সভায় জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়।

দেশে মোবাইল অপারেটরগুলো এখন ৩,৭, ১৫ ও ৩০ দিন মেয়াদি ইন্টারনেট প্যাকেজ দিতে পারে। এর বাইরে ‘আনলিমিডেট’ বা নির্দিষ্ট মেয়াদহীন কিছু প্যাকেজ রয়েছে, যার জনপ্রিয়তা কম এবং এগুলো নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজ কিনলে অনেক সময় দেখা যায়, মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ডেটা অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কেউ যদি আগের কেনা প্যাকেজটি আবার কেনেন, তাহলে অব্যবহৃত ডেটা পরের প্যাকেজে যোগ হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহকের মেয়াদ শেষের আগে প্যাকেজ কিনতে মনে থাকে না। আবার অনেক গ্রাহক ভিন্ন প্যাকেজ কেনেন। তখন আর অব্যবহৃত ডেটা পরের প্যাকেজে যোগ হয় না।

এ বিষয়ে কী নীতি হওয়া উচিত তা বিটিআরসির জরিপে গ্রাহকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে প্রায় ৮৮ শতাংশ গ্রাহক মেয়াদকালের মধ্যে যেকোনো প্যাকেজ কিনলে, অব্যবহৃত ডেটা যোগ হওয়ার নীতি চেয়েছেন। বাকিরা মেয়াদকালের মধ্যে একই পরিমাণের ভিন্ন মেয়াদের প্যাকেজ কিনলে এবং মেয়াদের মধ্যে একই প্যাকেজ কিনলে, অব্যবহৃত ডেটা যোগ হওয়ার নীতির পক্ষে। উল্লেখ্য, বিটিআরসির উপস্থাপনায় এ ক্ষেত্রে আলাদা হার উল্লেখ করা হয়।

বিটিআরসি জানিয়েছে, মোবাইল ডেটার মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার একটি খসড়া পরিকল্পনা তারা করেছে। এর জন্য অনলাইনে জরিপটি করা হয়েছে। এতে প্রায় ৫৪৯ গ্রাহক অংশ নেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীর বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবী।

সভায় বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন। তিনি জানান, বেশিসংখ্যক গ্রাহক ইন্টারনেট প্যাকেজের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০টির মধ্যে রাখার মত দিয়েছেন। বেশির ভাগ গ্রাহক চান, ইন্টারনেট প্যাকেজের মেয়াদ হওয়া উচিত তিনটি—৭ দিন, ৩০ দিন ও নির্দিষ্ট মেয়াদহীন (আনলিমিটেড)।

গ্রাহকদের কাছে প্রশ্ন ছিলো, ডেটার দাম কেমন হওয়া উচিত? জবাবে প্রায় ৫৩ শতাংশ গ্রাহক বলেন, প্রতি গিগাবিট (জিবি) ইন্টারনেটের দাম যে কোনও মেয়াদের জন্য সমান হওয়া উচিত। ২৭ শতাংশ গ্রাহক বলেছেন, ভিন্ন মেয়াদের জন্য ডেটার দাম ভিন্ন হওয়া উচিত; আর বাকিরা বলেছেন, স্বল্পমেয়াদি ডেটার দাম কম হওয়া উচিত।

ডেটা প্যাকেজের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার পক্ষে প্রায় ৪৬ শতাংশ এবং ভিন্ন মেয়াদের প্যাকেজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণের পক্ষে প্রায় ২১ শতাংশ গ্রাহক। বাকি গ্রাহকের অর্ধেক প্রতি জিবির জন্য সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্য এবং অর্ধেক ভিন্ন মেয়াদের ডেটার জন্য একই সর্বনিম্ন ও ভিন্ন ভিন্ন সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

অবশ্য অনুষ্ঠানে ডেটার মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়। দাম নির্ধারণের বদলে মান উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। টেলিযোগাযোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্নএশিয়ার জ্যেষ্ঠ পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান সরকার কর্তৃক মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়াকেও প্রাগৈতিহাসিক চিন্তা বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, বাজারে অনেক প্রতিযোগিতা আছে। দাম নির্ধারণের বদলে যে অসংগতি আছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে সমাধান করা উচিত।

বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকলে দাম বেঁধে দিতে হয় না বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম জাবের। তিনি মোবাইল অপারেটরগুলোর বর্তমান প্যাকেজ–পদ্ধতিরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সেবার মান বাড়ানোর দিকে বিটিআরসির নজর দেওয়া উচিত।

মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফরহাদ বলেন, প্যাকেজ বেশি থাকলে গ্রাহকেরা বিশেষ করে তরুণেরা পছন্দেরটি বাছাই করে নিতে পারেন।

মতবিনিময় সভায় সরাসরি ও অনলাইনে বেশ কয়েকজন গ্রাহক যুক্ত ছিলেন। তাঁরা সেবার মান নিয়ে অসন্তোষের কথা জানান। উপস্থিত বেশির ভাগ গ্রাহক ছিলেন টেলিটকের।

অপারেটরদের মধ্যে রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম টেলিযোগাযোগ সেবার ওপর উচ্চ হারে কর আরোপের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ১০০ টাকার মধ্যে নানা রকম কর ও ফি হিসেবে সরকারের কোষাগারে যায় ৫৪ টাকা।

বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ সভায় জানান, মতবিনিময় সভায় যেসব মতামত এসেছে, তা পর্যালোচনা করা হবে।

বিটিআরসির কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (টেলিকম) মো. মাহবুব-উল-আলম, গ্রামীণফোনের জ্যেষ্ঠ পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) হোসেন সাদাত, বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঞা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।