উবারের ১ লাখ ২৪ হাজার নথি ফাঁস হলো যেভাবে।
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান উবারের গোপন নথি ফাঁস হয়েছে। একটি-দুটি নয়, ১ লাখ ২৪ হাজার নথি। এসব নথি থেকে সামনে এসেছে মারাত্মক কিছু তথ্য।
জানা গেছে, উবার তার ব্যবসা বিস্তারে আশ্রয় নিয়েছে প্রতারণার। শোষণ করছে চালকদের। আইন লঙ্ঘন ও পুলিশের সঙ্গেও প্রতারণা করছে। আর এ কাজে সহায়তা করেছেন বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, ধনকুবের ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
উবারের ফাঁস হওয়া নথির ভিত্তিতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান প্রতিবেদন প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। কিন্তু কীভাবে ফাঁস হলো এই বিপুল নথি? ফাঁস করলো কে? এবার জানা গেছে সেই তথ্য।
নথি ফাঁস করা ব্যক্তির নাম মার্ক ম্যাকগান। ৫২ বছর বয়সি লোকটি পেশায় লবিস্ট। এক সময় উবারের শীর্ষ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। লবিস্ট হিসেবে উবারের হয়ে কাজ করেছেন ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায়। এসব অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে উবারের যোগসাজশ গড়ার যে প্রচেষ্টা, তার নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। অবশেষে তিনিই ফাঁস করলেন উবারের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য।
নথি ফাঁসের কারণ উল্লেখ করে গার্ডিয়ানকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মার্ক ম্যাকগান জানান, এই কাজে তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে তাঁর অনুশোচনাবোধ। উবার জেনেশুনে অনেক দেশে আইন লঙ্ঘন করেছে বলে এখন বিশ্বাস করেন তিনি। ম্যাকগান বলেন, ‘উবার তার চালকদের আর্থিক সুবিধা প্রদান সম্পর্কে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমিই সেই লোক, আমিই এসব (তথ্য ও নথি) সংবাদমাধ্যমকে দিয়েছি। আমিই আবার মানুষকে বলেছি, এই নিয়ম বদলাতে হবে।’
সত্যটা সবাইকে জানানো উচিত বলেই মনে করেন ম্যাকগান।
উবারের যেসব নথি গার্ডিয়ান পেয়েছে, তার মধ্যে শীর্ষ কর্মকর্তাদের ই-মেইল, মোবাইল ফোন মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ, উবারের বিভিন্ন প্রেজেন্টেশন, নোটবুক এবং ইনভয়েস রয়েছে। নথিতে ৪০টি দেশে উবারের ব্যবসার তথ্য রয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি যেসব কাজ করেছে, তার তথ্য রয়েছে ওইসব নথিতে। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) মাধ্যমে বিশ্বের ৪০টি সংবাদমাধ্যমের ১৮০ জন সাংবাদিককে এসব নথি দিয়েছে গার্ডিয়ান।
গার্ডিয়ান বলছে, যেসব দেশে রাইড শেয়ারিং অবৈধ, সেসব দেশে ব্যবসা শুরুর আগে নতুন আইন করার ব্যবস্থা করেছে উবার। গার্ডিয়ানসহ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম এসব নথির নাম দিয়েছে ‘দি উবার ফাইলস’।
উবারের এই প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে যেসব রাজনীতিকের নাম এসেছে, তাঁদের মধ্যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রয়েছেন। অর্থমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি উবারকে সাহায্য করেন। যুক্তরাষ্ট্রে উবারের ব্যবসা বিস্তারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দুই উপদেষ্টা ডেভিড প্লুফ ও জিম মেসিনা। এই দুজন উবার কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দেন।
‘দি উবার ফাইলস’ অনুযায়ী, নেদারল্যান্ডসে ব্যবসা প্রসারে উবারকে সহায়তা করেন ইউরোপিয়ান কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিলি ক্রোস। দেশটির প্রধানমন্ত্রীও এতে যুক্ত ছিলেন বলে জানায় গার্ডিয়ান। আর ব্রিটেনে উবারের ব্যবসা প্রসারে সাহায্য করেন জর্জ অসবর্ন ও সাজিদ জাভিদসহ অন্তত ৬ মন্ত্রী।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, উবার কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ যাতে স্পর্শকাতর তথ্য না পায় সেজন্য ‘কিল সুইচ’ ব্যবহারের আদেশ দিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। অন্তত ৬টি দেশে তারা এ ধরনের নির্দেশনা দেন বলে নথিতে উঠে এসেছে।