একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে দিশেহারা বৃদ্ধ দম্পতি
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : ‘আমার তো ব্যাটাপুত (ছেলে) নাই। একটা ভ্যান ছিলো কাটকুট করে চলতাম। সংসারে একটা মেয়ে আছে, তিন বছর আগে স্বামী ছাড়া (ডিভোর্স) দিছে। একটা নাতি ছোয়াল আছে। ভ্যানটা চুরি হইয়া গেছে। আমার এখন চলার মতো কোনও পরিস্থিতি নাই। এখন আমরা কীভাবে চলবো?’
কথাগুলো বলছিলেন রোকেয়া খাতুন (৫৫)। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের ভ্যানচালক লুৎফর রহমান লতিফের (৮৪) স্ত্রী। সংসারের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ব্যাটারিচালিত ভ্যান চুরি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা।
ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী লতিফের বয়স ৮৪ বছর। এই বয়সে বিশ্রাম নিয়ে দিনযাপনের কথা লতিফের। কিন্তু ছেলে না থাকায় ভ্যান চালিয়ে চারজনের সংসার চালাতেন তিনি। কিন্তু গত শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে তাঁর ভ্যানটি চুরি হয়ে যায়। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও ভ্যানের সন্ধান পান নি। পরদিন তিনি কুমারখালী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
জানা গেছে, লতিফের জরাজীর্ণ দুই কক্ষবিশিষ্ট টিনশেড ঘরে স্ত্রী, মেয়ে-নাতিসহ চারজনের বসবাস। প্রায় আট বছর আগে বিভিন্নজনের সহযোগিতায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ভ্যানটি কিনেছিলেন। রবিবার (১২ মে) দুপুরে লতিফের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, চৌচালা টিনশেড ঘরের চালা ও বেড়ায় অসংখ্য ছিদ্র। একটি কক্ষে নেই দরজা-জানালা। ঘরের সামনে ভ্যান রাখার স্থান করা হয়েছে। সেখানে ভ্যানের চার্জারটি পড়ে আছে। ঘরের বারান্দায় বসে আছেন স্বামী-স্ত্রী। তাঁদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ।
লতিফ জানান, ঘটনার দিন সকাল বেলা দেখেন তাঁর ভ্যান নেই। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ভ্যান না পেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তাঁর ভাষ্য, ছেলে না থাকায় ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। ভ্যানটি হারিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে তাঁদের। একটা ভ্যান কিনতে সবার সহযোগিতা চান এই বৃদ্ধ।
সাহেব আলী নামে লতিফের এক প্রতিবেশী জানান, এলাকার সবচেয়ে গরিব ও অসহায় মানুষ লতিফ। ভ্যানটি হারিয়ে পরিবার নিয়ে তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন।
যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, জীবিকার তাগিদে বৃদ্ধ বয়সেও ভ্যান চালান লতিফ। ভ্যানটি চুরি হওয়ায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে পরিবারটি।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম জানান, ভ্যান চুরির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। সেটি উদ্ধারে তৎপর রয়েছে পুলিশ।