গ্রেনেড হামলায় আহত কাজল : মাঝে মাঝে মনে হয় বাম পা খসে পড়বে।

গ্রেনেড হামলায় আহত কাজল : মাঝে মাঝে মনে হয় বাম পা খসে পড়বে।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : ‘গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারে যে রায় হয়েছে, সেটাই যথেষ্ট নয়। যারা এই ঘৃণ্য ঘটনা ঘটিয়েছে এবং যারা এর পেছনের মদদদাতা- তাদের সবারই কঠিন শাস্তি হোক। বিশেষ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বিচার এবং তারও ফাঁসির রায় হতে হবে। যাতে বিশ্বের কোথাও কেউ এমন নৃশংস ঘটনা আর ঘটাতে সাহস না পায়। আদালতের রায়ও অবিলম্বে কার্যকর হতে হবে, যেনো বেঁচে থাকতেই সেটা দেখে যেতে পারি।’

কথাগুলো বলছিলেন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত সাবেক এমপি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদিক অ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল। বাঙলা কাগজ ও ডনের সঙ্গে আলাপকালে গ্রেনেড হামলার রায় নিয়ে তাঁর প্রত্যাশার পাশাপাশি সেদিনের হামলার স্মৃতিচারণ করেন তিনি।

কাজলের ভাষায়, হামলার পর থেকে দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন। দিন যতো যাচ্ছে, ততোই তাঁর অবস্থা খারাপ হচ্ছে। এখন বয়স বেড়ে যাওয়ায় ব্যাথা, যন্ত্রণা, কামড়ানো, পোড়ানো- সবকিছুই আগের চেয়ে অনেক বেশি। ওষুধ খেতে খেতে মাথার চুলও পড়ে গেছে। দাঁড়িয়ে থাকা বা চলাফেরাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় স্প্লিন্টার বিদ্ধ বাম পা বুঝি কোমর থেকে খসে পড়বে।

কাজল বলেন, সেদিন সমাবেশে অস্থায়ী মঞ্চের খুব কাছাকাছি ছিলেন তিনি। গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বৃষ্টির মতো এসে তার বাম পায়ে আঘাত করে। এতে পায়ের তালু ও আঙুলগুলো কুঁকড়ে যায়। এরপর একটার পর একটা গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটে। গ্রেনেডগুলোর স্প্লিন্টার তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করছিলো। দেখতে না দেখতেই চারদিকে প্রচণ্ড ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। এ সময় কীভাবে যেনো পাশেই একটি দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। পরে গুলির আওয়াজ শুনতে পান। এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে শুনেছেন দলের কার্যালয়ের প্রবেশপথে পড়া অবস্থায় তাঁকে পাওয়া গেছে। প্রাণ বাঁচানোর জন্য অনেক মানুষ তাঁর গায়ের ওপর দিয়েই চলে গেছেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৎকালীন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাইমুম সরওয়ার কমলসহ কয়েকজন নেতাকর্মী তাঁকে উদ্ধার করে সামনে নিয়ে যেতেই কিছুটা হুঁশ ফিরে পান। ট্যাক্সিক্যাবে করে নেতাকর্মীরা তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অনেক আহত মানুষকে নিয়ে আসা হয়েছিলো। তাই জায়গা না পেয়ে প্রথমে লাশের স্তূপের কাছে রাখা হয়েছিলো। কোনও ডাক্তার-নার্স না পাওয়ায় পরে বাইরে এনে একটি ভ্যানে শুইয়ে রাখা হয়। ওই ভ্যানে করেই তাঁকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত ৯টা পর্যন্ত চিকিৎসার পর নেতারা তাঁকে চাদর দিয়ে ঢেকে ও লুকিয়ে ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যান। প্রকাশ্যে নিয়ে গেলে পুলিশের হয়রানির মুখে পড়ার ভয় ছিলো। ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ট্রমা সেন্টারে রেখে চিকিৎসার পর বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাঁকে। ৪ সেপ্টেম্বর ভারতের কলকাতার গিয়ে একটি হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি।

এখন কেমন আছেন- এ প্রশ্নের জবাবে কাজল বলেন, ১৮ বছরে দেশ-বিদেশে বহুবার চিকিৎসা নিয়েছেন। শরীর থেকে মাত্র ৩৭টি স্প্লিন্টার বের করা গেছে। এখনও তিনশরও বেশি স্প্লিন্টার রয়ে গেছে। অনেক স্প্লিন্টার শিরার মধ্যে ঢুকে গেছে। যন্ত্রণা দিন দিন বাড়ছেই, একমাত্র ভুক্তভোগীই বুঝতে পারবেন এই যন্ত্রণার কথা।