‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগিটি মারা গেলো’ : ভাড়া বৃদ্ধি প্রত্যাখ্যান যাত্রী কল্যাণ সমিতির

‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগিটি মারা গেলো’ : ভাড়া বৃদ্ধি প্রত্যাখ্যান যাত্রী কল্যাণ সমিতির
ডন প্রতিবেদন : এ যেনো ডাক্তার আসার পূর্বেই রোগির মৃত্যুবরণ। প্রায় ৩ দিন ধর্মঘটের পর ভাড়া বৃদ্ধি শেষে ‘জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্যের অধিক হারে মুনাফা লুটপাটের সুযোগ দিতে সরকার মালিকদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী একচেটিয়াভাবে বাস ও লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি করেছে’- এমন অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বর্ধিত গণপরিবহন ভাড়া প্রত্যাখ্যান করে একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য বাস ও লঞ্চ ভাড়া নির্ধারণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। আজ সোমবার (৮ নভেম্বর) সকালে নগরীর সেগুনবাগিচায় শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে ‘যাত্রী স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে মালিক শ্রমিক সরকার মিলেমিশে একচেটিয়াভাবে গণপরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি’র প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর সব পক্ষেরসঙ্গে আলোচনা করে সহনীয় মাত্রায় ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও ভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন হয় নি। বাস ও লঞ্চ মালিকদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে সরকার তাদের চাহিদা অনুযায়ী একচেটিয়া ভাড়া বাড়িয়ে দিতে যাত্রী প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে বাস ও লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি করেছে।’ ‘বিআরটিএ ও বিআইডাব্লিউটিএর অনেকেই মালিকদের পকেটে ঢুকে পড়েছে’- অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘যাত্রীদের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে গলাকাটা ভাড়া নির্ধারণের ফলে দেশের নিম্ন ও মধ্য আয়ের জনসাধারণকে আরও একদফা গভীর সঙ্কটের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’ ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীতে যেভাবে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, তা জুলুম বলা চলে। সিএনজির মূল্য বৃদ্ধির পর একদফা ভাড়া বাড়ানো হয়েছিলো, আবার তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর আবার ভাড়া বাড়ানো হলো। এতে যাত্রী সাধারণ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীর বর্ধিত বাস ভাড়া কার্যকরের আগে এখানে কতগুলো বাস গ্যাসে চলে আর কতগুলো তেলে চলে তার সুরাহা হওয়া দরকার। ভাড়া নির্ধারণের ব্যয় বিশ্লেষণে পুরনো বাসকে নতুন বাস হিসেবে দেখানো হয়েছে, চালক-হেলপারদের বেতন, বোনাস প্রদানের মিথ্যা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, ২০ বছরের পুরনো বাসেও ব্যাংক লোন দেখানো হয়েছে। এভাবে নানা খাতে অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি দেখিয়ে একলাফে ১ টাকা ৪২ পয়সার ভাড়া ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি। ‘সঠিক ব্যয় বিশ্লেষণ করলে বড় জোর ১ টাকা ৬০ পয়সা ভাড়া নির্ধারণ করা যেতো।’ লঞ্চ ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত এক দশকে প্রভাবশালী মালিকদের নিয়ন্ত্রণে আমাদের নৌপথে বেশ কয়েকটি ৩-৪ কোটি টাকা দামের লঞ্চ যাত্রীসেবার বহরে যুক্ত হয়েছে। এসব লঞ্চের ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার যাত্রী বহনের সক্ষমতা রয়েছে। এ ধরনের কোটি টাকার লঞ্চ চালাতে লাখ টাকা খরচ হয়। এই লঞ্চের সংখ্যা ২০-৩০টির বেশি না হলেও ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে এসব বড় লঞ্চের খরচকে ব্যয় বিশ্লেষণে এনে ভাড়া নির্ধারণ করে দেশের ছোট লঞ্চ ও ট্রলারের ভাড়া বৃদ্ধি করার কারণে যাত্রীর স্বার্থ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সাশ্রয়ী নৌপথের ভাড়া ক্রমশ সড়কপথের দ্বিগুণ হয়েছে। এমন অন্যায্য ও অগ্রহণযোগ্য ভাড়া বাতিল করে ১ হাজার ৫শ থেকে ২ হাজার যাত্রী ধারণ সক্ষমতার বড় লঞ্চের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৮০ পয়সা এবং ১৫০ থেকে ৫শ জন ধারণ ক্ষমতার লঞ্চ ও ট্রলারের ভাড়া ১ টাকা ২০ পয়সা করার দাবি জানাচ্ছি।’ সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, নিবন্ধিত যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত সংগঠন হিসেবে যাত্রী কল্যাণ সমিতিকে যাত্রীসাধারণের প্রতিনিধি হিসেবে বাস ও লঞ্চের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হলে এ ধরনের অবাস্তব একচেটিয়াভাবে ভাড়া বাড়ানো যায় না বলেই বাস-লঞ্চের জনস্বার্থের ভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মালিক-সরকার মিলেমিশে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের আয়োজন করে। একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য, বাস্তবসম্মত ভাড়া নির্ধারণের জন্য তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।