প্রধানমন্ত্রী : ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু যমুনা ও পদ্মা সেতুর কথা জাপানে বলেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী : ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু যমুনা ও পদ্মা সেতুর কথা জাপানে বলেছিলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপানে যমুনা ও পদ্মা সেতুর (অর্থায়নের) কথা জানিয়েছিলেন। পরে যমুনা সেতু তাঁদের আমলেই শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আর জাইকা আমাদের আমলেই পদ্মা সেতুর ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছিলো। অথচ বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে, তা বাদ দিয়ে আবারও ফিজিবিলিটি স্টাডি করায়। পরে আমাদের আমলে জাইকা যে স্থানের কথা বলেছিলো, বিএনপির আমলেও পদ্মা সেতু নিয়ে সেই একই স্থানের কথা বলে।’

প্রধানমন্ত্রী আজ বুধবার (২২ জুন) বেলা ১১টায় তাঁর কার্যালয়ের শাপলা হলে পদ্মা সেতু নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আমরা ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি এবং আমাদের আমলেই আমরা পদ্মা সেতুর কাজ সম্পূর্ণরূপে শেষ করেছি। অথচ এই পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র ছিলো, অনেকেই অনেক কথা বলেছিলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বাতিল করার পর কোন সুশীল কী কী কথা বলেছিলেন, তা পত্রিকার পাতা থেকে নিয়ে পড়ে শোনান।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের কথা বলেই বন্যা প্রসঙ্গে বলেন। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে ব্রিজ, কালভার্ট এমনভাবে করে দেবো, যাতে সহজেই পানি নিষ্কাশন হয়ে যায়।’

‘সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের বন্যাটা থাকবে। অবশ্য আমরা আগেই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছি। এখনও আমাদের যা যা করণীয় তা করছি এবং সংশ্লিষ্ট সকলকেই এ ব্যাপারে জোরালোভাবে কাজ করতে হবে।’

পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। হাজার হাজার মানুষের শ্রমে আজ পদ্মা সেতু হয়েছে।

‘নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু হয়েছে’ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‌‘এজন্য আমি বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, কারণ তাঁরা আমার পাশে ছিলেন। তাঁদের সহযোগিতার জন্য আজ পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’

‘এ সময় পদ্মা সেতু নির্মাণে গুনগত মানে কোনও আপোস করা হয় নি’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সেতু নির্মাণ হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ দিয়ে। পদ্মা সেতুর পাইল বা মাটির গভীরে বসানো ভিত্তি এখন পর্যন্ত বিশ্বে গভীরতম। সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত এর পাইল বসানো হয়েছে।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, যারা পদ্মা সেতু নিয়ে নানা ধরনের কথা বলেছিলো, তাদের সকলকেই পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে দাওয়াত দেওয়া হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কখনো কারও কাছে মাথা নত করবে না। আমাদের প্রকল্পগুলোতে অর্থায়নের জন্য আমরা এখন যাঁদের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছি, তাঁদেরকে দাতা বলছি না, কারণ আমাদের তো তাঁদেরকে সুদসহ অর্থ ফেরত দিতে হয়। যদিও সেই সুদটা পরিমাণে কম, কিন্তু আমাদেরকে সুদসহ মূল টাকাটা তো দিতে হয়। আমরা তো ভিক্ষা নেই না। তাই আমরা এখন তাঁদেরকে উন্নয়ন সহযোগী বলি।

সবশেষে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন উৎসব সবাই করবে। আর উদ্বোধনস্থলে আসার জন্য আমরা যেনো হুড়োহুড়ি না করি। উৎসব করতে আসার সময় যেনো কোনও দুর্ঘটনায় না পড়ি। আমাদেরকে এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

উল্লেখ করা যেতে পারে, আগামী ২৫ জুন পদ্মার মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশের পর জাজিরা প্রান্তে সমাবেশ করবেন প্রধানমন্ত্রী। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে পদ্মা সেতুর ওপারের মানুষজনই সেই সমাবেশে অংশ নিতে পারবেন। তবে সারা বাংলাদেশেই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের উৎসব হবে। আর পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন ২৬ জুন পদ্মা সেতু সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ার পর সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর এটিই প্রথম সংবাদ সম্মেলন। এর আগে করোনাকালের সংবাদ সম্মেলনগুলো হয়েছিলো ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে।