পুষ্পরাজ্য

পুষ্পরাজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : ফুল ভালোবাসে না, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। ফুল সৌন্দর্য ও বিশুদ্ধতার প্রতীক। তাই মানুষ ফুল ভালোবাসে। শহরের মানুষদের ফুলের দোকানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ফুলের ঘ্রাণ ও ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা যায়। নারায়ণগঞ্জ শহরের আগে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ে অবস্থিত বন্দরের সাবদি গ্রামটি বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্রের রূপ নিয়েছে। সেখানে অল্প খরচে দেখা যায় নানা রকমের ফুলের বাগান।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় সাবদি, দিঘলদী গ্রামের অবস্থান। গ্রামগুলোর পাশ ঘেঁষে বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। নদের পশ্চিম ধারে সারি সারি কাঠমালতি ফুলের বাগান। বর্তমানে ফুল চাষের জন্য বহুল পরিচিত নারায়ণগঞ্জের এই সাবদি গ্রাম। এখানে শীতের সময় সরিষা চাষ করা হয়। ভ্রমণপ্রিয় এবং ছবি তুলতে পছন্দ করা মানুষদের জন্য সাবদি খুবই সুন্দর একটি জায়গা। শীতকালে এখানে সরিষা চাষ করা হলেও ফেব্রুয়ারির দিকে চাষ করা হয় নানা রকমের ফুল। রঙবেরঙের ফুলে ছেয়ে যায় জমিগুলো। সাবদি গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামগুলোতে গেলে দেখা যায়, গ্রামের বাড়ির আঙিনা ও রাস্তার পাশ ঘেঁষে টগরফুলের বাগান। গ্রামটির কয়েক বর্গমাইল এলাকাব্যাপী কাঠমালতি, গাঁদা, ডালিয়া ও জিপসি ফুল চাষ করতে দেখা যায়। এতো ফুল একসঙ্গে দেখলে যে কারও মন জুড়িয়ে যাবে।

শহরের কোলাহল থেকে ক্লান্তি দূর করতে এক টুকরো কোলাহলবিহীন শান্তির জায়গা এই সাবদি। এখানে প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাঁশ ও টিনের বেড়া দিয়ে টঙ-দোকান তৈরি করে বিক্রি হচ্ছে খাবার। সাবদির অন্যতম একটি জনপ্রিয় খাবার বৌয়া ও ভর্তা। সাবদি বাজারে পাওয়া যায় বাঙালির পছন্দের বৌয়া ভাত ও ভর্তা। এখানে ফুল চাষ করে বদলে গেছে অনেক পরিবারের আর্থিক অবস্থা। পুরুষ থেকে শুরু করে এই গ্রামের নারী এবং বাচ্চাদেরও দেখা যায় বাগানগুলোতে কাজ করতে। তাঁরা কেউ কেউ নিজেদের বাগানে কাজ করে, আবার কেউ দৈনিক মজুর হিসেবেও কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। নারীরা সাংসারিক সুখ-দুঃখের আলাপচারিতার মধ্যে ডালা ভরে ফুল তুলে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। কাঠমালতির ফুল দিয়ে ‘গাজরা’ ও ফুল দিয়ে মালা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সাবদির নারীরা। সাবদিতে সপ্তাহের ছুটির দিন বেশি ভিড় জমে দর্শনার্থীদের। তখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ফুলের মালা বিক্রি করতে দেখা যায়। সাবদির উৎপাদনকৃত ফুল রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব প্রান্তের চাহিদা পূরণ করে থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় চাষিদের ব্যস্ততা খুব বেড়ে যায়। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারিতে একাধারে কয়েকটি দিবস পালিত হয়। ভালোবাসা দিবস, বসন্ত দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তাই এ সময় চাষিরা ফুল বিক্রি করে বেশ লাভবান হন।

ফুল চাষি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ডেমরার জুটমিলের চাকরি চলে যাওয়ার পর তিনি ঢাকায় ফেরি করে ফুলের ব্যবসা শুরু করেন। রবিশস্য চাষ করে যা পান, তার থেকে আট-দশ গুণ বেশি লাভবান হচ্ছেন ফুল চাষ করে। এ কারণে অনেকেই বাপ-দাদার চাষ পরিবর্তন করে ফুল চাষের প্রতি ঝুঁকেছেন। 

চাষি জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, কাঠমালতি ও বেলী ফুলের চাষ বেশি হয় এখানে। কারণ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ভালোবাসা দিবসে এর চাহিদা বেশি থাকে। আর এ কারণে ফুল চাষের প্রতি চাষিদের আগ্রহ বেশি। 

এক বিঘা জমিতে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করা হলে প্রায় আট হাজার স্টিক পাওয়া যায়। এ ছাড়াও এখানে ডালিয়া, জিপসি, আলমেন্ডা, গাঁদা ও রজনীগন্ধা ফুলের চাষ করা হয়। ফুল চাষ করে গ্রামের চিত্রই পাল্টে গেছে। এ গ্রামের পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে ফুল চাষ করে।