ফেসবুকে ভাইরাল নানা তথ্য : সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যায় মৃত্যু কত?
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলা কাগজ; সিলেট : সিলেট ও সুনামগঞ্জে দেখা দিয়েছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। দুই জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে পানিতে। সোমবার (২০ জুন) পর্যন্ত পানিবন্দি আছেন অন্তত ৪০ লাখ মানুষ। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। কিছু প্রাণহানির ঘটনাও শোনা গেছে।
তবে বিদ্যুৎ, মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট না থাকার কারণে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় নি। প্রশাসনের কাছেও সঠিক তথ্য নেই। এ সুযোগে প্রাণহানির সংখ্যা নিয়ে মনগড়া নানা তথ্য ভাইরাল হচ্ছে ফেসবুকে। এই বন্যায় দুই জেলায় অর্ধশত মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে নানা পোস্টে দাবি করা হচ্ছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক ১ জনের ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৩ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আর সুনামগঞ্জের ছাতকের নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন ১ জনের মৃত্যুর কথা। সে হিসাবে সোমবার পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রশাসনের তথ্য বলছে।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে আরও ৭ জনের মৃত্যুর খবর শোনা গেছে। যদিও প্রশাসন তা নিশ্চিত করে নি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মজিবুর রহমান বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘পানিতে পড়ে যাওয়া সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজন মারা গেছেন।’
‘এ ছাড়া এখন পর্যন্ত মৃত্যুর কোনও তথ্য আমি পাই নি।’
সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত আজমেরী হক বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, বন্যায় এ পর্যন্ত ৩ জন মারা যাওয়ার খবর তিনি জেনেছেন। এর মধ্যে ১ জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ও ২ জন পানিতে ভেসে গিয়ে মারা গেছেন।
‘এ ছাড়া পানিতে ভেসে যাওয়া ১ জন এখনও নিখোঁজ আছেন।’
ডিসি জানান, পানিতে ছিঁড়ে যাওয়া বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুতায়িত হয়ে রোববার (১৯ জুন) নগরের রায়নগরে নিজ বাসার সামনে মারা গেছেন সিলেট মহানগর যুবলীগ নেতা টিটু চৌধুরী।
সেদিনই স্থানীয় একটি শ্মশানে টিটুর মরদেহ সৎকার করা হয় বলে জানান সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি।
সদরের ইউএনও নুসরাত আজমেরী হক জানান, একইদিন সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার নোয়াপাড়া এলাকার নিজ বাসায় বন্যার পানির ময়লা পরিষ্কার করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছেন মনির হোসেন নামে এক যুবক।
তিনি আরও জানান, গত শুক্রবার (১৭ জন) উপজেলার নলকট গ্রামের কলেজছাত্র আব্দুল হাদি পানিতে তলিয়ে যান। ওইদিনই তাঁর লাশ ভেসে ওঠে। সে সময় আরও ১ জন পানিতে তলিয়ে মারা গেছেন।
তবে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও স্থানীয় একটি কলেজের প্রভাষক সেলিম আহমদ জানিয়েছেন, পানিতে তলিয়ে উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নে আরও ২ জন মারা গেছেন। তাঁরা হলেন ছাত্রলীগ নেতা এ কে আবুল কাশেম ও তাঁর দাদি ছুরেতুন নেছা। তাঁদের বাড়ি ইউনিয়নের সুজাতপুর গ্রামে।
সেলিম বলেন, ‘আবুল কাশেম তাঁর পরিবারের সঙ্গে নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায় বসবাস করেন। বন্যার পানি বেড়েছে জেনে গ্রামের বাড়ি থেকে বৃদ্ধ দাদি ও চাচাতো বোনকে উদ্ধার করতে বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সকালে একটি নৌকা নিয়ে আসেন। দাদিকে নিয়ে শহরে ফেরার পথে সুজাতপুর আইডিয়াল স্কুল এলাকায় পানির স্রোতে নৌকাটি ডুবে যায়।’
‘এ সময় তাঁর ছোট চাচাতো বোন উল্টে যাওয়া নৌকা ধরে প্রাণে বাঁচলেও দাদি-নাতি দুজনই পানিতে তলিয়ে যান। শুক্রবার দাদি ছুরেতুন নেছার লাশ ভেসে ওঠে। আর রোববার (১৯ জুন) সকালে আবুল কাশেমের লাশ একই জায়গায় ভেসে ওঠে। তাঁদের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে।’
তবে এ দুজনের মৃত্যুর বিষয়ে কোনও তথ্য পান নি বলে জানিয়েছেন ইউএনও নুসরাত।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে পানিতে তলিয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ফেসবুকে প্রচার হয়েছে। তবে একে গুজব বলে আখ্যায়িত করেছেন উপজেলার ইউএনও লুসিকান্ত হাজং।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত কোনও মৃত্যুর তথ্য পাই নি। অনেকে মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন। ১ জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়েছিলেন। তবে তিনি এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।’
বন্যায় পানিতে তলিয়ে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ছৈলা-আফজালাবাদ ইউনিয়নের রাধানগর এলাকার জুনেদ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ছাতকের ইউএনও মামুনুর রশীদ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছাতক পৌরসভার কানাখালী রোডের আখড়া এলাকায় পীযূষ ও জাউয়া বাজার এলাকায় হানিফা বেগম নামে এক স্কুলছাত্রী মারা গেছেন পানিতে তলিয়ে। তবে এই দুই ঘটনা ইউএনও নিশ্চিত করেন নি।
এ ছাড়া মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আদিত্যের মহাল এলাকায় ঢলের পানিতে তলিয়ে এক শিশু মারা যাওয়ার খবরও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এটিও প্রশাসন নিশ্চিত করে নি।
এদিকে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যাকবলিতদের উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, ‘আমরা কানাইঘাট থেকে অসুস্থ অবস্থায় ৭ জনকে উদ্ধার করেছি। তার মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে মৃত্যুর কোনও তথ্য আমরা এখন পর্যন্ত আমরা পাই নি।’