ডন প্রতিবেদন : অন্যের নামে নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর ও ভুয়া ই-মেইল দিয়ে বিক্রয় ডটকমে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেখানে মোবাইলের বিজ্ঞাপন দেওয়া, গ্রাহকের আস্থা অর্জনের জন্য পুলিশ পরিচয় দেওয়া, এমনকি অগ্রিম টাকা পেতে কুরিয়ার সার্ভিসের বুকিং স্লিপ পাঠানো, সবখানেই প্রতারণার আশ্রয়। অনলাইন শপ বিক্রয় ডটকমকে ব্যবহার করে প্রতারণার ‘হাট খুলেছে’ একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলেছে, গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা।
এটি প্রায় সবাই জানেন যে, মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে বাড়ি-গাড়ি সবকিছুই কেনাবেচা করা হয় বিক্রয় ডটকমে। এমনকি খুঁজে নেওয়া যায় চাকরি এবং মনের মতো জীবনসঙ্গীও।
ডিজিটাল এই প্ল্যাটফর্মে পণ্য বিক্রির জন্য প্রতিদিন লাখ লাখ বিজ্ঞাপন প্রচার হয়। বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই মোবাইল সেট অর্ডার করেছিলেন। তবে কয়েকদফা টাকা পরিশোধের পরও পান নি কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি।
এ বিষয়ে প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা বলেছেন, ৩ থেকে ৪ দিন তাদেরসঙ্গে যোগাযোগ রাখি। তাদের ফোন খোলা থাকে আবার থাকে না। আমার সন্দেহ হতে থাকে। তারই একপর্যায়ে তাদের দুটি নম্বরই বন্ধ পাই।
ভুক্তভোগী আরেকজন ব্যক্তি জানান, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে যোগাযোগের পর তারা আমাকে বলেছে এ কাগজটি তাদের না। এটি ভুয়া কাগজ।
বিক্রয় ডটকমে পণ্যের বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
এ বিষয়ে পুলিশ বলছে, চক্রটি প্রথমেই অন্যের নামে নিবন্ধিত সিম সংগ্রহ করে। সেই সিম দিয়ে তারা একটি ই-মেইল অ্যাকাউন্ট খোলে। পরে ভুয়া সিম আর মেইল দিয়ে বিক্রয় ডটকমে খোলা হয় অ্যাকাউন্ট। দেওয়া হয় মোবাইলের বিজ্ঞাপন।
পুলিশ আরও জানায়, বিজ্ঞাপন অধিক প্রচারের জন্য তারা টপ অ্যাড বাবদ পোস্ট প্রতি ২০৯ টাকা দিতো বিক্রয় ডটকমকে। আস্থা অর্জনের জন্য নিজেদেরকে পুলিশ দাবি করে গ্রাহকদের তারা ভুয়া আইডি কার্ডও পাঠাতো। ফলে গ্রাহকরা অগ্রিম বাবদ ৫০ ভাগ টাকা পাঠিয়ে দিতেন। কুরিয়ার সার্ভিসের সিলমোহরযুক্ত বুকিং স্লিপ পাঠানোর পর বাকি টাকা পাঠিয়ে দিতেন গ্রাহকরা। সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের একটি বুকিং বই তারা ৩৫ হাজার টাকায় কিনতো।
পণ্য বিক্রির পুরো প্রক্রিয়াটিকে অস্বচ্ছ দাবি করে পুলিশ বলছে, দায় এড়ানোর সুযোগ নেই বিক্রয় ডটকম ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের। আইনের আওতায় আনা হবে তাদেরকেও।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেছেন, বিক্রয় ডটকমের এখানে অনেক দায় রয়েছে। ইতোপূর্বে বিক্রয় ডটকমের অনেকগুলো এমন ঘটনা ঘটেছে। এক্ষেত্রে তাদের সচেতন হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু আমাদের বারবার বলার পরও তাদের টনক নড়ে নি এবং তারা কোনও পদক্ষেপও নেয় নি। তাদের এক্ষেত্রে তদারকি বাড়াতে হবে। তা না হলে ভোক্তারা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
এদিকে জনগণকে সিমকার্ড কাউকে না দেওয়ার অনুরোধ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, যার যার সিম সে নিজে ব্যবহার করবে কারণ এটি তাদের একটি পরিচয়। অন্য কেউ যদি তার সিম ব্যবহার করে প্রতারণা করে, তাহলে সে এতে ফেঁসে যেতে পারে এবং তাই হচ্ছে। আইনের দৃষ্টিতে নিজের সিম অন্য কাউকে দেওয়াও একটি অপরাধ এবং এক্ষেত্রে আমরা তাদেরও আইনের আওতায় আনবো।
‘কুরিয়ার সার্ভিসের যারা বইগুলো ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিলো, কর্তৃপক্ষেরও এ বিষয়ে সজাগ থাকা উচিত। তদন্তের স্বার্থে এটি নিয়েও কাজ করা হবে’, জানান তিনি। সেইসঙ্গে অনলাইনে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে আগাম টাকা না দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।