বৈশাখী মেলা-উৎসবকে সামনে রেখে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

বৈশাখী মেলা-উৎসবকে সামনে রেখে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : আসন্ন বৈশাখীর মেলা ও উৎসবকে সামনে রেখে মৃৎশিল্পীরা মাটি সামগ্রী তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার স্থানীয় পাল বাড়িতে এখন চলছে হাতি, ঘোড়া, গরু, খরগোশ, টিয়া, কবুতর, পুতুল এবং হাঁড়ি-পাতিলসহ সাংসারিক কাজে ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন ধরেনের মাটির উপকরণ তৈরির কাজ।

তবে বৈশাখী মেলায় মাটির ব্যাংকসহ শিশুদের খেলনা সামগ্রীর কদর বেশি থাকায় এগুলো বেশি তৈরি করা হচ্ছে।

কুমার পরিবারের নারী ও পুরুষ সদস্যরা মিলে মাটির এসব জিনিসপত্র তৈরি করে দিন পার করছেন। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার তন্তর ইউনিয়নের পাল বাড়িতে বৈশাখী মেলাকে ঘিরে হরেক রকমের মাটির খেলনা ও তৈজসপত্র তৈরি করা হচ্ছে।

হাতে তৈরি এসব কাঁচা মাটির জিনিসপত্র রোদে শুকানো হচ্ছে। পরে আগুনে পুড়িয়ে রং করা হচ্ছে। 

তন্তর পাল বাড়িতে ৪টি পরিবারের বসবাস। এখানকার নারী-পুরুষ সকলের মাটির জিনিসপত্র তৈরির অভিজ্ঞতা রয়েছে। মৃৎশিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় মাটির এক একটি বস্তু চিরচেনা রূপ পাচ্ছে। রং-তুলির আচরে এসব সামগ্রী যেনো প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে।

কথা বললে সমীর পাল জানান, মাটির খেলনাসহ হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করছেন তাঁরা। আসছে বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে এগুলো তৈরি করা হচ্ছে।

৫ কন্যা সন্তানের জনক সমীর পাল আরও বলেন, এ পেশায় টিকে থাকা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্য কোনও আয়-রুজির পথও নেই। বিভিন্ন মেলা-উৎসব-অনুষ্ঠানে বিক্রির জন্য মাটির খেলনা তৈরি করেন তাঁরা। এর পাশাপাশি মাটির এসব জিনিসপত্র পাইকারিভাবে বিক্রি করেন। পাইকাররা বাড়িতে এসে এগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে মেলায় বিক্রি করেন। 

সমু পাল ও শোভা রানী দম্পতি জানান, আগের মতো মাটির হাঁড়ি পাতিলের কদর নেই। এখন বিভিন্ন মেলায় বিক্রির জন্য মাটির খেলনা সামগ্রী তৈরি করে থাকেন তাঁরা। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় পূর্ব-পুরুষদের পেশাটি এখনও ধরে রাখার চেষ্টা করছেন তাঁরা। 

ষোলঘরের শ্রী যতন পাল জানান, প্লাস্টিক ও মেলামাইনের যুগে মাটির জিনিসপত্র বিলীন হতে যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পটি ধরে রাখার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি না থাকলে মৃৎশিল্পটি একেবারেই হারিয়ে যাবে। 

হাঁসাড়ার মদন পাল, অরুণ পাল, লক্ষণ পাল ও সুরন্ড পাল জানান, পূর্ব পুরুষদের সবাই এই পেশায় কাজ করে গেছেন। তাঁরাও নানা প্রতিকূলতার মাঝে তাঁদের ৪৩০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পটি ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার হাঁসাড়া, ষোলঘর, বাঘড়া, শ্রীনগর সদর এলাকার হরপাড়া, শ্রীনগর বাজার সংলগ্ন পালবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশতাধিক কুমার পরিবার এখনও মৃৎশিল্পটি ধরে রেখেছেন। পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ পূজার প্রতিমা, মিষ্টির হাঁড়ি, দইয়ের খোসাসহ সাংসারিক কাজকর্মে ব্যবহারযোগ্য নানান ধরনের মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিকিকিনির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।