বিড়াল দিয়ে শুরু রহস্যের সমাধান

বিড়াল দিয়ে শুরু রহস্যের সমাধান

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ ও ডন; গাজীপুর : এ কে এম জিয়াউর রহমান ও মাহমুদা আক্তার জলি, শিক্ষক দম্পতি। গাজীপুরের দক্ষিণ খাইলকুরের বগারটেক এলাকায় গত ১৮ আগস্ট নিজেদের প্রাইভেটকারেই মেলে তাঁদের নিথর দেহ। দু জনের কারও শরীরে ছিলো না আঘাতের কোনও দাগ। তদন্তে নেমে পুলিশের একাধিক সংস্থা প্রায় আড়াই মাস জোড়া লাশের রহস্য খুঁজতে খুঁজতে হয়রান!

শিক্ষক দম্পতির ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে নিগর্ত বিষাক্ত গ্যাসের কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তবুও আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ও তদন্তের পর শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু রহস্যের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন গাছা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইব্রাহীম হোসেন। 

ইব্রাহীম হোসেন বলেন, এটি আমরা এখন প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল পাওয়া গেলে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হতে পারবো। একটি বিড়াল দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে পুলিশ প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন। তবে এখনো ভিসেরা রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। 

‘শিক্ষক দম্পত্তি যে প্রাইভেটকারটি ব্যবহার করেছিলেন, সম্প্রতি সে গাড়িতে একটি বিড়াল রেখে এসি ছেড়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১০ থেকে ১২ মিনিট পর বিড়ালটি দুর্বল হতে থাকে, এক পর্যায়ে বিড়ালটির অসুস্থতা বাড়তে বাড়তে নুয়ে পড়ে। শিক্ষক দম্পতির ও স্কুল থেকে রওনা দেওয়ার পর যে স্থান থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়, সেই দুরত্বটিও ছিলো অনুমানিক একই সময়ের। এই পরীক্ষা থেকে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শিক্ষক দম্পত্তির মৃত্যু বিষাক্ত গ্যাস থেকেই হয়েছে। এখন শুধু ভিসেরা রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।’ 

গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শাফি মোহাইমেন বলেন, এখন পর্যন্ত নিহতদের ভিসেরা প্রতিবেদন আসে নি। যার কারণে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও দেওয়া হয় নি। প্রতিবেদন কবে আসবে; সেটিও ঠিক করে বলা যাচ্ছে না। তবে এসব পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ তিনমাস সময় লাগে। 

গাছা থানা পুলিশ জানায়, থানা পুলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা নানা তথ্য-উপাত্ত ও আলামত সংগ্রহ করেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। কিন্তু কোথাও কোনও ধরনের ক্লু পাওয়া যায় নি। কোনোভাবেই হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এমন কোনও তথ্য তাঁদের কাছে আসে নি। এরই মধ্যে গাছা থানায় ইব্রাহীম হোসেন নতুন ওসি যোগদান করেন। তিনি এক সময় ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টে (সিআইডি) কর্মরত ছিলেন। তিনি যোগ দেওয়ার পর মামলার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কিছুদিন আগে গাড়িতে একটি বিড়াল রেখে পরীক্ষা করা হয়। গাড়িতে বিড়ালটি রেখে এসি ছেড়ে বন্ধ করে দেওয়া হলে ১০ থেকে ১২ মিনিট পর বিড়ালটি নুয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে বিড়ালটির অসুস্থতা বাড়তে থাকে। পরে পুলিশ গাড়ির ও গাড়ির ভেতরে থাকা বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে তাঁকে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), বিআরটিএ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সসহ আরও কয়েকটি সংস্থায় পাঠায়।