নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : সকাল আটটা বাজতেই কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি শুরু। ঠিক ১০ মিনিট পর রেলস্টেশনে বিদ্যুৎ চলে যায়। ২৮ মিনিট পর ৮টা ৩৮ মিনিটে বিদ্যুৎ আসে। এতোক্ষণ ধরে স্টেশনের কয়েকটি কাউন্টারে টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকে। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে আজ মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সকাল আটটায় এমন চিত্রই দেখা গেলো।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত শনিবার থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। আজ চতুর্থ দিনে বিক্রি হচ্ছে ৩০ এপ্রিলের টিকিট। ঈদের সম্ভাব্য তারিখ হচ্ছে আগামী ২ মে। ঈদের ছুটি বিবেচনায় গত কয়েক দিনের টিকিটের তুলনায় ৩০ এপ্রিলের টিকিটের চাহিদা অনেক বেশি। ফলে ওই দিনের টিকিট কাটতে রেলস্টেশনে টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড়ও অনেক। এই ভিড় সামলাতে পারছে না স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সকালে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পর বেশ কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে যায়। এ সময় কয়েকটি কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করা টিকিটপ্রত্যাশীরা ভোগান্তিতে পড়েন। কিছুক্ষণ পরপরই তাঁরা স্টেশন চত্বরের সারিতে দাঁড়িয়ে শোরগোল ও চিৎকার করছিলেন।
তেমনই একজন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। তিনি ঈদে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে গ্রামের বাড়িতে যাবেন। নীলসাগর এক্সপ্রেসের টিকিট কিনবেন। মোশাররফ বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, সকাল আটটায় টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ৮টা ১০ মিনিটে একবার কারেন্ট চলে যায়। এ সময় আমাদের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি বন্ধ ছিলো। এতো ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর কারও কি ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগে?
এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বাঙলা কাগজ ও ডনের কাছে দাবি করেন, ‘সকাল থেকে দুবার বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে। প্রথমবার বিভ্রাটের সময় আমরা জেনারেটর চালু করেছি। পরের বার বিদ্যুৎ বিভ্রাট পাঁচ মিনিটের মতো ছিলো। এ সময় টিকিট বিক্রি বন্ধ ছিলো।’
তিনি বলেন, টিকিটপ্রত্যাশীরা তাঁদের নিজ নিজ এনআইডি দিয়ে টিকিট কাটছেন। এ কারণে টিকিট বিক্রিতে কিছুটি ধীরগতি আছে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে, টিকিট যাঁর, ভ্রমণ তাঁর। কালোবাজারি ঠেকাতেই রেলওয়ের পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যাত্রার সময় টিকিট ও যাত্রীর এনআইডি যাচাই করা হবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে স্টেশন ব্যবস্থাপক বলেন, ‘উড়োজাহাজে চড়তে যেমন জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হয়, তেমনি রেলের টিকিট নিয়ে কালোবাজারি ঠেকাতে এনআইডির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ঈদে যাচাই না হলেও পরের ঈদে হয়তো হবে। সমস্যা কোথায়।’
এদিকে কাউন্টারে সাহ্রি খেয়ে আরামবাগের বাসা থেকে কমলাপুরে এসেছেন রেনুপা বেগম। তাঁর পরিবারের সদস্য পাঁচজন। এ কারণে রাজশাহীর পাঁচটি টিকিটের প্রয়োজন। তবে স্টেশনে এসে তিনি জানতে পারেন চারটির বেশি টিকিট দেওয়া হবে না।
রেলস্টেশনে টিকিটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকাকে অমানবিক কষ্ট উল্লেখ করে রেনুপা বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘যে কয়টা টিকিট পাই, কিনবো।’
‘এ ছাড়া তো উপায় নেই।’
‘স্টেশনে অনেক গরম। মাথার ওপরও কোনও ফ্যান নেই। সকাল সাড়ে আটটার দিকে একবার মাথা ঘুরে পড়ে গেছিলাম। পরে মাথায় পানি দিলে একটু স্বাভাবিক হই।’
দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কাউন্টারে পৌঁছান রেনুপা। এ সময় তিনি রাজশাহীর টিকিট চাইলে তাঁকে বলা হয়, উত্তরবঙ্গের টিকিট আর অবশিষ্ট নেই। সব টিকিট বিক্রি শেষ।
রেনুপা বলেন, কালকের টিকিটের জন্য এখনই লাইনে দাঁড়াতে বললেন কাউন্টারের বিক্রয় প্রতিনিধিরা।
স্টেশনে নারীদের ভোগান্তির অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বাঙলা কাগজ ও ডনের কাছে দাবি করেন, ‘আগে নারীদের টিকিট কাউন্টার ছিলো একটি। এখন সেটি দুটি করা হয়েছে। নারীদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।’
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদযাত্রা শেষে ট্রেনের ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ১ মে থেকে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ ২৭ হাজার ৮৫৩টি টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে অনলাইনে বিক্রি হবে ১২ হাজার ১৫৭টি এবং কাউন্টারে বিক্রি হবে ১৫ হাজার ৬৯৬টি।