প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান : উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে তরুণদের উচ্চমানের শিক্ষায় নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান : উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে তরুণদের উচ্চমানের শিক্ষায় নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।

বাসস : প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা তরুণ প্রজন্মকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের জন্য জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, তিনি চান যে তাঁরা প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ করে উচ্চমানের শিক্ষায় প্রস্তুত হোক।

তিনি বলেন, ‘একটি জাতির জন্য যুবসমাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি চাই যুবকরা প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ করে শিক্ষার ক্ষেত্রে উচ্চমানের হোক। আমাদের যুবসমাজ আমাদের জন্য একটি বড় শক্তি এবং তাঁরাই বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত দ্বিতীয়বারের মতো ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে এবং সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়া এবং তরুণরাই সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে, কারণ তাঁরাই ২০৪১ সালের মূল স্থপতি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশটা এগিয়ে যাবে, শত বাধা অতিক্রম করে। পৃথিবীর অনেক দেশ এখন বয়োবৃদ্ধদের দেশে পরিণত হয়েছে। আমরা সেটা হতে চাই না। কাজেই আমাদের এই যুবসমাজই পারবে সারা বাংলাদেশটাকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে।

যুবসমাজ সেবক হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবে- এমন আশা পোষণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যুবসমাজ মানুষের সেবক হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবে, নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করবে, পরিবারকে সহায়তা করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবসমাজকে সুশিক্ষিত করতে ক্ষমতায় এসেই কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ। করোনার মাঝে যুবসমাজই সবার আগে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। যা পুরো জাতির জন্য উৎসাহের কারণ।

শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কতৃর্ক যুবসমাজের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় যুবসমাজের সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর সরকার তরুণদের উন্নয়নে যথাযথ শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপুল সংখ্যক যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তাঁর সরকার বেসরকারি খাতে ব্যাংক, বীমা, টেলিভিশন এবং রেডিওসহ সবকিছু দিয়েছে।

তিনি বলেন, তাঁর সরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে, যেনো যুবকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাকরির জন্য বিদেশে যেতে পারে এবং এইভাবে তাঁরা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি ও জিনিসপত্র সংরক্ষণ করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবকদের কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে কোনও গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। কারণ তাঁরা যেনো উদ্যোক্তা হতে পারে এবং অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে।

তিনি এ সময় চাকরির পেছনে না ছুটে যুবসমাজকে উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে অপরকে চাকরি দেওয়ার এবং নিজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

তাঁর সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে ডাটা সেন্টার এবং কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে, যেখানে বিপুল সংখ্যক যুবসমাজের কর্মসংস্থানে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। 

তা ছাড়া তাঁর সরকারের গৃহহীনকে বিনামূল্যে ঘর-বাড়ি প্রদান, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পসহ সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের বিভিন্ন কর্মসূচি কর্মসংস্থানের সুযোগকে অবারিত করেছে।

‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দানের পাশাপাশি যুবকরাই এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর যুবসমাজের উন্নয়নের ধারাবাহিতকায় ছেদ পড়ে।

সরকারপ্রধান বলেন, ’৭৫ এর পর সামরিক সরকার ক্ষমতা দখল করে। জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলেন। সেই জিয়াউর রহমান যুবসমাজের হাতে অস্ত্র, মাদক তুলে দিয়ে তাদেরকে বিপথে পরিচালিত করেছিলেন। তিনি যুবসমাজের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন।

অনুষ্ঠানে জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ থেকে যুবকদের জন্য কিছু অংশ পাঠ করেন শেখ হাসিনা।

কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অন্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তৃণমূলে শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও জাতি গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে অবদানের জন্য ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২২’ প্রাপ্ত যুবকদের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে যুবসমাজ জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে।’ 

‘আমি আশা করি, আগামী প্রজন্ম তাঁদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হবে এবং জাতি গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত করবে।’

তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন যে, কোভিড -১৯ মহামারির শীর্ষ সময়ে যখন ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে অনেকে নিকটাত্মীয়দের মৃতদেহ ছেড়ে চলে গিয়েছিলো, তখন বিপুল সংখ্যক যুবক জনসাধারণকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলো।

তরুণেরাই বাংলাদেশের প্রধান সম্পদ এবং তাঁরাই দেশ গড়বে বলে বঙ্গবন্ধুর একটি মন্তব্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী করে তরুণ প্রজন্মকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর জোর দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বিজয়ীদের হাতে ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২২’ তুলে দেন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। 

মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন স্বাগত বক্তব্য দেন।

পুরস্কার হিসেবে বিজয়ীদের ক্রেস্ট, সনদপত্র এবং এক লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়।

পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে মাসুদ আলম ও মেঘনা খাতুন অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন।

শেখ হাসিনার বিভিন্ন মানবিক কর্মকাণ্ডের ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২২ পেলেন যাঁরা : যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান ক্যাটাগরিতে অসাধারণ অবদানের জন্য এ বছর সম্মাননা পেয়েছেন শরীয়তপুরের বাসিন্দা মাসুম আলম এবং নেত্রকোণার বাসিন্দা কামরুন নাহার লিপি।

শিক্ষা, বিজ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তি ও কারিগরি ক্যাটাগরিতে অসাধারণ অবদানের জন্য সম্মাননা পেয়েছেন জাগো ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক করভি রাকসান্দ এবং পেন ফাউন্ডেশনের মেঘনা খাতুন।

দেশপ্রেম, বীরত্ব ও সাহসিকতার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সম্মাননা পেয়েছেন রাঙ্গামাটির বাসিন্দা এন কে এম মুন্না তালুকদার এবং লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা রাজু আহমেদ।

জ্যেষ্ঠদের প্রতি আদর্শ সেবা বা সমাজকল্যাণে অবদানের জন্য বরিশালের বাসিন্দা মিল্টন সমাদ্দার এবং সুনামগঞ্জের বাসিন্দা কাস্মিরুল হক পেয়েছেন সম্মাননা।

ক্রীড়া, কলা (চারু ও কারু) ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সম্মাননা পেয়েছেন জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক শেরপুরের মেয়ে নিগার সুলতানা জ্যোতি এবং রাজশাহীর বাসিন্দা মোস্তফা সরকার।