র‌্যাব : শিক্ষকের মৃত্যু আমাদের ১৮ কোটি মানুষের জন্য লজ্জার ও অপমানের।

র‌্যাব : শিক্ষকের মৃত্যু আমাদের ১৮ কোটি মানুষের জন্য লজ্জার ও অপমানের।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : তাঁর (শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার) এ মৃত্যু আমাদের জন্য লজ্জার ও অপমানের। তাঁর এ মৃত্যু বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য লজ্জার এবং অপমানের। সাভারের আশুলিয়ার শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের মৃত্যু প্রসঙ্গে এভাবেই কথাগুলো বলেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, ‘হিরোইজম দেখাতে গিয়ে স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যা করেছে জিতু।’

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) দুপুরে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

খন্দকার আল মঈন বলেন, বুধবার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় র‌্যাব-১ এবং র‌্যাব-৪ এর যৌথ অভিযানে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জিতুকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিতু দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলো। সে শিক্ষা জীবনে বিরতি দিয়ে প্রথমে স্কুল, পরে মাদরাসা ও সর্বশেষ পুনরায় স্কুলে ভর্তি হয়। স্কুলে সবার কাছে একজন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র হিসেবেই পরিচিত ছিলো সে।

তিনি বলেন, সহপাঠীদের সঙ্গে প্রায়ই সে মারামারি করতো এবং ছাত্রীদের ইভটিজিং করতো। স্কুল প্রাঙ্গণে সবার সামনে ধূমপান, স্কুল ইউনিফর্ম ব্যতিত স্কুলে আসা-যাওয়া, মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করতো। স্কুলের পরিবেশ নষ্টের জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

মঈন আরও বলেন, তার নেতৃত্বে এলাকায় একটি কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠে । বিভিন্ন সময় গ্যাং সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে করে যত্রতত্র আধিপত্য বিস্তার করতো। পরিবারের কাছে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে জিতু তার গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তাদের ওপর চড়াও হতো ও বিভিন্ন সময় এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে হামলা ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে শোডাউন দিতো।

র‌্যাব জানায়, স্কুলের এক ছাত্রীর সঙ্গে জিতু অযাচিতভাবে ঘোরাফেরা করলে বিষয়টি শিক্ষক উৎপলের নজরে আসে। তিনি জিতুকে বারণ করলে সে শিক্ষকের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। ওই ছাত্রীর কাছে নিজের হিরোইজম প্রদর্শন করার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ জুন একটি ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প স্কুলে নিয়ে আসে এবং তা শ্রেণিকক্ষের পেছনে লুকিয়ে রাখে। পরবর্তীতে কলেজ মাঠে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন মাঠের এক কোণে শিক্ষক উৎপল কুমারকে একা পেয়ে স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক আঘাত করতে থাকে। জিতু শিক্ষককে প্রথমে পেছন থেকে মাথায় আঘাত করে এবং পরবর্তীতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতরভাবে জখম করে। তখন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জানা গেছে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় উৎপল কুমার সরকার সোমবার (২৭ জুন) সকালে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। ভাইকে মেরে গুরুতর আহত করার ঘটনায় উৎপলের মৃত্যুর আগেরদিন ২৬ জুন উৎপলের ভাই বাদি হয়ে সাভারের আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় জিতুকে প্রধান আসামি করা হয়।

র‌্যাব বলছে, উৎপল কুমার সরকারকে জিতু হত্যার উদ্দেশেই আঘাত করেছিলো। 

এদিকে, ওই ঘটনায় মঙ্গলবার (২৯ জুন) রাতে কুষ্টিয়া থেকে অভিযুক্ত জিতুর বাবা উজ্জ্বলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই রাতেই তাকে আশুলিয়া থানায় আনা হয়। এরপর তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাকে ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।