শীত থাকতে পারে জানুয়ারি জুড়ে, হতে পারে বৃষ্টি
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : শীতে কাঁপছে ঢাকাসহ দেশের বিস্তীর্ণ জনপদ; এ ধারা অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পৌষের শেষ সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কোথাও সূর্যের দেখা মিলছে তো কোথাও মিলছে না। দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীত আর কুয়াশার দাপটে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। আর শহরের ভাসমান মানুষের মধ্যে যাঁরা রাস্তা বা উম্মুক্ত স্থানে থাকেন, তাঁদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্রই শীতের দাপটে জবুথবু দশা। পুরনো রেকর্ড না ভাঙলেও শীত অনুভব হচ্ছে বেশি। অবশ্য এজন্য নানা কারণ দেখাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। কেউ দায়ী করছেন জলবায়ু পরিবর্তনকে, আবার কেউ বলছেন এবার প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই শীত পড়ছে। তবে আগামীতে বাড়তে পারে শীতের তীব্রতা। এমন অবস্থা থাকতে পারে জানুয়ারি মাস জুড়ে। তারপরও ফেব্রুয়ারিতেও বইতে পারে আরও দুটি শৈত্যপ্রবাহ।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এবারের শীত মৌসুমে সর্বনিম্ন। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় শনিবার এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। তাপমাত্রা খুব বেশি না নামলেও পাঁচ কারণে এবার শীতের অনুভূতি বেশি হচ্ছে বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক মল্লিক।
তিনি বলেন, দেশে দিন-রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম থাকছে। বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমাণ কম। মাঝরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত কখনও বিকাল ৩টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত থাকে দেশ। ভূপৃষ্ঠ থেকে আকাশের দিকে প্রায় ২০০ মিটারের একটি কুয়াশাস্তর থাকে। এর কারণে সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে আসতে পারছে না। ফলে ভূপৃষ্ঠ এবং এর সংলগ্ন বাতাসের উষ্ণতা বাড়তে পারেনি। ভারতের হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের তাপমাত্রা অনেক কম। শীত মৌসুমে সাধারণত ওইসব এলাকা (উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমদিক) থেকে বাংলাদেশমুখী বাতাসের গতি থাকে। সেটাও শীতল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মেঘমুক্ত আকাশ। সাধারণত আকাশ মেঘলা থাকলে বিকিরণ প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠ শীতল হতে সময় লাগে। তাপমাত্রা ভূপৃষ্ঠে বেশিক্ষণ থাকতে পারে। ফলে ধরণী শীতল হতে না হতেই নতুন দিনে সূর্যের আগমন ঘটে। এতে মেঘমুক্ত আকাশ ধরণীকে দ্রুত শীতল করে। পাশাপাশি দীর্ঘ-রজনী সূর্যের আগমন বিলম্বিত করে। এসব কারণ উপস্থিত থাকায় ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাসের গতির জেট এক্সট্রিম (শীতল বাতাসের লাইন বা যেখানে তাপমাত্রা জিরো ডিগ্রি) নিচে (ভূপৃষ্ঠের দিকে) নেমে এসেছে। এসব কারণ মিলিয়েই বাংলাদেশে শীতের প্রকোপ বেড়েছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম বলেন, আগামী দু-এক দিন এই শীতের অনুভূতি থাকতে পারে। দুই দিনের মধ্যে কুয়াশা কিছুটা কমতে শুরু করবে। এতে রোদ বেড়ে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। কমতে থাকবে শীতও।
গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুপুরে দেশের কয়েকটি জেলায় কয়েক ঘণ্টার জন্য রোদের দেখা পাওয়া গেলেও শনিবার সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। সকাল থেকে দিনভর শীতের তীব্রতা ছিল, সন্ধ্যার পর হিমল হাওয়ার সঙ্গে আরও জেঁকে বসে ঠান্ডা। পাঁচ দিন ধরে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম। দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ মৃদু থাকলেও দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে এলে সেখানে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার দেশের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গাসহ ১৬ এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। বাকি জেলাগুলোতে তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, এবার শীত মৌসুম পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েই থাকতে পারে। জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে একটি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে শীতকালে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও শীত বেশি অনুভূত হওয়ার প্রধান কারণ হলো- জলাভূমি, খাল-বিল, নদী-নালার পরিমান কমে কংক্রিটের অবকাঠামো বেড়ে যাওয়া। ঢাকায় আবহাওয়ার আচরণ হয়ে উঠছে সৌদি আরবের মরুভূমির মতো। মরুভূমি যেমন দিনের বেলা প্রচণ্ড গরম ও রাতে প্রচণ্ড ঠান্ডা হয়-ঢাকায়ও তেমনটি হচ্ছে। কারণ কংক্রিটের অবকাঠামো দিনের বেলায় দ্রুত সূর্যের তাপ শোষন করে গরম হয়ে উঠে ও রাতে দ্রুত তাপ ছেড়ে দিয়ে ঠান্ডা হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, আগামী ১৪, ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি আবারও দেশব্যাপী হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টির ২ থেকে ৩ দিন পর ১৮ থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আবারও এক সপ্তাহের জন্য দেশব্যাপী কুয়াশা ও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এবারের শীত মৌসুম ঢাকায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামতে পারে। এ ছাড়া সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের চেয়ে বেশি ঠান্ডা পড়তে পারে।
অস্ট্রেলিয়া সরকারের আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা ব্যুরো অব মেট্রোলজি থেকে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত আবহাওয়া কেমন যাবে, তার একটি পূর্বাভাস দেওয়া হয়। গত নভেম্বরে দেওয়া ওই পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, এবার বাংলাদেশে শীতকাল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দীর্ঘ হবে, তীব্রতাও বেশি থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, সাধারণত বাংলাদেশে শীত নামে ডিসেম্বরে, এবার নভেম্বরেই দেশের উত্তরাঞ্চল ও যশোর-চুয়াডাঙ্গায় শীত পড়া শুরু করেছিল। শীতর আয়ুস্কাল এবার দীর্ঘ হতে পারে।