সেই ফেরদৌসীকে নিয়ে এখন দিশেহারা পরিবার, প্রয়োজন ভালো চিকিৎসা

সেই ফেরদৌসীকে নিয়ে এখন দিশেহারা পরিবার, প্রয়োজন ভালো চিকিৎসা

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : দুই দফা অস্ত্রোপচারের পর হাসপাতাল ছাড়লেও এখনো বসলে উঠে দাঁড়াতে পারে না ৯ বছরের ফেরদৌসী, প্রস্রাব করতে গেলেও চিৎকার দিয়ে ওঠে যন্ত্রণায়।

এই বয়সে যখন তাঁর স্কুল আর খেলাধুলায় মেতে থাকার কথা, তখন শারীরিক এমন ক্ষত আর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা নিয়ে দিন কাটছে তাঁর।

অচল সংসারে একটু ভালো চলার আশায় ফেরদৌসীকে ঢাকায় ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে পাঠিয়েছিলেন তাঁর মা-বাবা। কদিন পরই খবর পান, ওই ভবন থেকে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে মেয়ে।

গত বছরে ৬ আগস্টের সেই ঘটনায় মামলা দায়ের করে ফেরদৌসীকে নির্যাতনের অভিযোগ করে তাঁর পরিবার। সেই মামলায় গত সপ্তাহে আদালত থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন সৈয়দ আশফাক ও তাঁর স্ত্রী তানিয়া খন্দকার।

ওই ঘটনা নিয়ে প্রথম দিকে তেমন আলোচনা হয় নি। কিন্তু ঠিক ছয় মাস পর গত ৬ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ আশফাকের বাসা থেকে একইভাবে পড়ে প্রীতি উরাং নামে আরেক কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যুর পর আলোচনা হচ্ছে ফেরদৌসীর পড়ে যাওয়া নিয়েও।

আহত ফেরদৌসীর চিকিৎসা আর ‘২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণে’ প্রথম মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেও ৬ ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় ঘটনায় রিমান্ড শেষে এখন কারাগারে আছেন আশফাক ও তাঁর স্ত্রী তানিয়া।

ফেরদৌসীর পরিবার বলছে, মেয়েটি ঘরে ফিরলেও এখনো সে স্বাভাবিক কাজকর্ম বা চলাফেরা করতে পারে না। পরিবারের উপার্জন না থাকায় তাঁকে স্কুলে পাঠানোর কথা তাঁরা ভাবতেও পারেন না।

ফেরদৌসীর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের কাহেতুরা গ্রামে। শহুরে বস্তির মতো ঘিঞ্জি বাড়িঘরের মাঝে সরু গলি ধরে খানিকটা যাওয়ার পর দেখা যায় তাঁদের ভাঙাচোরা টিনের ঘর। এক শতাংশ জায়গার ওপর অনেক বছর আগে ঘরটি তৈরি করলেও এখন আর মেরামতের সামর্থ্য নেই পরিবারের।

গত সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ওই বাড়িতে গিয়ে কথা হয় ফেরদৌসী, তাঁর মা জোসনা বেগম ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে। ফেরদৌসীর বাবা কেলো মিয়া বাড়িতে ছিলেন না।

সত্তোরর্ধ্ব কেলো মিয়ার প্রথম স্ত্রী ১৬ বছর আগে মারা গেলে জোসনা বেগমকে তিনি বিয়ে করেন। সেই ঘরে তার তিন মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স ১৫, মেজো ফেরদৌসীর নয়, আর ছোট মেয়ের বয়স তিন বছর।

গৃহকর্মী প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুর ঘটনায় সৈয়দ আশফাক গ্রেপ্তার হওয়ার পর ফেরদৌসীদের বাড়িতেও ভিড় করতে শুরু করেন সাংবাদিকরা। জানার চেষ্টা করছেন আগের ঘটনা। সে কারণে ফেরদৌসীদের বাড়ি এরই মধ্যে গ্রামে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে। নতুন কেউ এলেই স্থানীয়রা জড়ো হচ্ছেন, উৎসাহ নিয়ে কথা বলছেন।

কী হয়েছিল সেদিন :
ভবন থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় ফেরদৌসী তাঁর মাকে বলেছে, বাসার মালিক তাঁকে বাড়িতে যেতে দিচ্ছিলো না। তাই সে ওপর থেকে জানালা দিয়ে নামার চেষ্টা করছিলো। কিছুদূর নামার পর পা পিছলে নিচে পড়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে যায়।

এরপর বাসার মালিক তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে কয়েকদিন তাঁর চিকিৎসা হয়। পরে নেওয়া হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে।

ফেরদৌসীর মা জোসনা বলেন, বাসার মালিকের চাপের মুখে মেয়েকে বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিলো।

ওই ঘটনার পর বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন ফেরদৌসীর খালাত ভাই নাজিমুদ্দিন।

তিনি বলেন, তাঁদের আরেক আত্মীয় হেদায়েতুল্লাহ ঘটনা পর থেকে পরিবারটির আসা-যাওয়া ও থাকাসহ বিভিন্ন খরচ বহন করছিলেন। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিলো না জোসনা বেগমের। সেটি করতে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতে হয়েছে। সেখানে লেগেছে ৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া চিকিৎসা থেকে যাতায়াতসহ সব খরচই হেদায়েতুল্লাহ দিয়েছেন।

জোসনা বেগমের গ্রাম সম্পর্কে আত্মীয় হেদায়েতুল্লাহ বলেন, পরিবারটির তখন এমন অবস্থা ছিলো, তাঁদের পাশে না দাঁড়ালে এসব কিছুই হতো না। টাকা-পয়সা না থাকায় তাঁরা দিশেহারা ছিলো। পরে সব বাদ দিয়ে আগে পরিবারটি যেনো একটা বিচার পায়, মেয়েটি যেনো চিকিৎসা পায়, সেই চেষ্টা আমরা করেছি।