সন্ত্রাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত পাহাড়ে অভিযান চলবে
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত ৭ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া অভিযান রবিবার (২১ এপ্রিল) ১৪তম দিনে পৌঁছেছে। অভিযানে ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় সরাসরি জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও কুকিচিনের সন্ত্রাসীরা পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে যৌথ বাহিনীর ওপর চোরাগোপ্তা হামলার চেষ্টা করছে। গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে রুমা উপজেলায় অভিযানকালে কুকিচিনের সন্ত্রাসীরা যৌথ বাহিনীর ওপর হামলা চালায়। এতে সেনাসদস্য করপোরাল রফিকুল ইসলাম নিহত এবং কয়েকজন সদস্য আহত হন। তবে এ ঘটনায় কুকিচিনের ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, দেশ ও বিদেশে অবস্থানরত কিছু বাংলাদেশি কুকিচিনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় সমর্থন দিচ্ছে এবং অপপ্রচার চালাচ্ছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এগুলো রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড। তাঁরা আরও বলেন, পার্বত্য তিন জেলাও বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মতো অবিচ্ছেদ্য অংশ। পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারীদের নিরাপদ ও শান্তিতে রাখতে বদ্ধপরিকর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁরা সেখানে নিরাপত্তা দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি রাস্তাঘাট এবং স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সরাসরি সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। দুর্গম এলাকা থেকে অনেক সঙ্কটাপন্ন রোগীকে হেলিকপটারে করে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করছেন এবং চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। পাহাড়ি-বাঙালিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই সেবামূলক নিরাপত্তা কাজে খুবই খুশি। ওই অঞ্চলের মানুষেরা কুকিচিনের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একেবারেই নির্মূলের দাবি করেছেন। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে প্রোপাগান্ডা চালানো হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়বে— এটা ভাবার কোনও কারণ নেই। আমাদের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা স্বাধীনতাযুদ্ধে জীবন দিয়ে অবদান রেখেছেন। তাঁরা সকল কিছুতেই জয়ী।
আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দেশের যে কোনও দুর্যোগে তাঁদের অবদান রেখে যাচ্ছেন। বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনেও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েও অনেকে শহিদ হয়েছেন। কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক চুলও পিছপা হন নি। জাতিসংঘ ঘোষিত যেসব দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে অন্য দেশের বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শতভাগ সফল হয়ে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে। সেসব দেশের জনগণও বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশংসা করে আসছেন। সার্বভৌম বাংলাদেশের একটি অবিচ্ছেদ্য ভূখণ্ড হলো : পার্বত্য অঞ্চল। এই ভূখণ্ডে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে বিনষ্ট করা হলে সমূলে উৎখাত করা হবে সন্ত্রাসীদের। বান্দরবানে কুকিচিন সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুযোগ দিয়েছেন। আলোচনার মাধ্যমেও সমাধানের সুযোগ দিয়েছেন। সেই সুযোগ না নিয়ে তারা ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুট করেছে। বান্দরবানে একের পর এক সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে শান্তি বিনষ্ট করেছে। সুযোগ দেওয়া সরকারের দুর্বলতা নয়, শান্তিতে বসবাস করার সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু আত্মসমর্পণ গ্রহণ না করে কুকিচিনের সদস্যরা সন্ত্রাসী কার্যক্রম বেছে নিয়েছে বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান। এই সন্ত্রাসীদের নির্মূল না করা পর্যন্ত যৌথ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেই জানিয়েছেন তাঁরা।
বান্দরবান এলাকার পাহাড়ি বাঙালি নেতৃবৃন্দরা বলেন, আমরা এখানে শান্তিতে বসবাস করছি। হঠাৎ করে কুকিচিনের সন্ত্রাসীরা বান্দরবান এলাকায় সরকারের সরলতার সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করে দেয়। এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পাহাড়ি ও বাঙালিদের কোনও সমর্থন নাই। তাদের কার্যক্রম শুধু সোশ্যাল মিডিয়া ও ওয়েবসাইটে। সেখানেও মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমান সরকার দেশের সব জেলায় যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে, সেই উন্নয়নের ধারা পার্বত্য অঞ্চলেও অব্যাহত আছে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, স্কুল , কলেজ এবং মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হাতের কাছেই বাসিন্দাদের সন্তানেরা সুশিক্ষা গ্রহণ করছে। যা এক সময় কেউ চিন্তাও করতে পারে নি। এই সরকারের শান্তি চুক্তির সুফল তাঁরা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
র্যাবের মহাপরিচালক খুরশীদ হোসেন বলেন, অভিযানে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে র্যাব সদস্যরাও রয়েছেন। বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য অঞ্চল। এই ভূখণ্ডে কোনও সন্ত্রাসীর জায়গা নেই। তাদের নির্মূল না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।